‘দলিতরা দেশকে আপন ভাবতে পারছেন না’

টপ নিউজ
image_154877.dr-mizanজয়পুরহাটের বার কাউন্সিলর সদস্য দলিত সম্প্রদায়ের একজন আইনজীবী বারের ক্যাফেটরিয়ায় দলিত লোকজনসহ চা-নাস্তা খেয়েছিলেন। এরপর সমস্ত কাপ-পিরিচসহ বাসন-কোসনের দাম মেটাতে হয়েছে তাকে। ক্যাফের মালিক এর কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, দলিতরা ওইসব বাসন ব্যবহার করায় এগুলো হয়ে পড়েছে জনসাধারণের ব্যবহারের ‘অযোগ্য’। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাঁওতাল ছাত্র এক রেস্তোরাঁয় ভাত খেতে গেলে তাকে কাঁচের বাসনের বদলে খাবার দেওয়া হয় টিনের বাসনে। এর কারণ হিসেবে রেস্তোরাঁর পরিচালক জানিয়েছেন, ‘নিম্নবর্গ’ হওয়ায় তাদের জন্য ওই ‘দুই নম্বরি’ বাসন-কোসনের ব্যবস্থা। ছাত্রটি উন্মোচন ডটনেট-এ ব্লগ লিখে করেন এ ঘটনার প্রতিবাদ।
সাতক্ষীরার কলারোয়ার জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান চাকরিপ্রার্থী একজন দলিত যুবককে দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘তুই মুচির ছেলে, তোর চাকরি হবে না!’
এ ছাড়া ভূমিজ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী অচিন্ত্য সাহা উত্তরবঙ্গে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, কোনো ছুটির পর স্কুল খুললে শিক্ষকরাই ধাঙর সম্প্রদায়ের দলিত ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ের শৌচাগার পরিষ্কার করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু অন্য শিশুরা এমন বৈষম্যের শিকার হয় না।
সোমবার সকালে ‘দলিত জনগোষ্ঠির মানবাধিকার ও সামাজিক মর্যাদা’-বিষয়ক এক গোলটেবিল সভায় দলিত ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির এমন জাত-পাত, বর্ণ ও শ্রেণিবৈষম্যের এমন নানান উদাহরণ হাজির করেন বক্তারা। ঢাকার ডেইলি স্টার ভবন মিলনায়তনে রিজিওনাল অন্ত্যজ ফোরাম (রাফ) ও অ্যাকশন এইড এ সভার আয়োজন করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অচিন্ত্য সাহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ দলিত ও ক্ষুদ্রজাতির সঙ্গে মূল জনস্রোতের বিভেদের দেয়াল থাকায় তারা বাংলাদেশকে ঠিক আপন বলে ভাবতে পারছে না। দারিদ্র্যতার কারণে তারা বঞ্চিত-শোষিত হওয়ার পাশাপাশি দলিত ও ক্ষুদ্রজাতি হিসেবেও অধিক শোষিত। এই অবস্থার পরিবর্তনে মানসিকতার পরিবর্তনের পাশাপাশি চাই আইনি সুরক্ষা। এ জন্য তিনি নাগরিক সমাজ প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’টি পাশ করার জন্য সরকারকে তাগাদা দেন।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দেশে বসবাসকারী দলিতদের মধ্যে জেলে, নমশূদ্র, হরিজন, দাই, ধোপা, রিশি, রাজবংশী, কায়পুর, বেহারা, নিকারী, পুণ্ডক্ষত্রিয়, হাজাম, ভগবেনে, পাড়ই, রসুয়া, বাজনদার, শাহজী, পাটনী, তেলী, বাশফোর, রবিদাস ইত্যাদি ছাড়াও ভাষাগত সংখ্যালঘু সাঁওতাল, ওঁরাও, মুণ্ডা, কোল প্রভৃতি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি প্রতি পদে চরম্য বৈষম্য ও জাত-পাতের শিকার। অথচ দলিত জনগোষ্ঠির স্বাতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈশষ্ট্য নৃতাত্তিক গবেষণার দাবি রাখে। তারা দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে করেছে আরো সমৃদ্ধ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদষ্টো এম হাফিজ উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি কাজী রোজি এমপি, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান, নারী অন্ত্যজ পরিষদের স্বরস্বতি দাস, হরিজন ঐক্য পরিষদের নির্মলচন্দ্র দাস প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *