আগামীকাল থেকে পেশাদার ফুটবল লিগ শুরু হচ্ছে। ঢাকা আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিং উদ্বোধনী খেলায় মুখোমুখি হবে। একইদিনে চট্টগ্রাম আবাহনী ও ফরাশগঞ্জের ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হচ্ছে না, বৃষ্টিতে মাঠ অনুপযুক্ত বলে লিগ শুধু ঢাকাতেই অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ঢাকাতে ম্যাচ হতে পারবে কিনা এ নিয়েও সংশয় রয়েছে। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মাঠ পুরো উপযুক্ত এখানে ম্যাচ না হওয়ার কারণ দেখছি না। কিন্তু গতকাল যে ভারী বর্ষণ হয়েছে তা যদি অব্যাহত থাকে লিগ চালানো কি সম্ভব? অর্থাৎ সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এবার লিগ নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। ঘোষণা ছিল ১২ জুন থেকেই লিগ হবে। কিন্তু আট ক্লাবের আবেদনে তা পেছাতে বাধ্য হয়েছে লিগ কমিটি। নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয় ২৮ জুলাই। কিন্তু স্পন্সরশিপ নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় লিগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। লিগের স্বত্ব কিনে নিয়েছে সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী তাদের স্পন্সর খুঁজে দেওয়ার কথা। অনেক চেষ্টার পরও তারা স্পন্সর খুঁজে পায়নি। সত্যি কথা বলতে কি কোনো প্রতিষ্ঠানই ফুটবলে বিনিয়োগ করতে চায় না। সাইফ গ্লোবাল লিখিতভাবে বাফুফেকেও জানিয়ে দেয়।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ফুটবল লিগ স্পন্সরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু অর্থ কম বা বেশি হোক না কেন কেউ ফুটবলে স্পন্সরশিপে আপত্তি করেনি। এই প্রথম আপত্তি উঠল। মানের অবনতি তো আছেই পেশাদার লিগে কোনো আকর্ষণ নেই। বড় বড় ম্যাচে গ্যালারি থাকছে ফাঁকা। এক সময়ে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে দুপুরের মধ্যেই গ্যালারি ভরে যেত। এখন দর্শক হাতেই গোনা যায়। অনেকে আবার জানেনই না হাইভোল্টেজ ম্যাচের কথা। ১০ বছরে পা দিচ্ছে পেশাদার লিগ। দেশসেরা আসরে বাফুফে কি কোনো নতুনত্ব আনতে পেরেছে। ক্রিকেটে স্পন্সরশিপের জন্য প্রতিযোগিতা চলে। কিন্তু ফুটবলে সেই অবস্থা নেই বলে প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। হবেই বা কীভাবে। এমন হ-য-ব-র-ল লিগে কেউ কি টাকা অর্থ দিতে চাইবে। বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন প্রয়োজনে স্পন্সর ছাড়াই লিগ হবে। বিরক্ত হয়ে হয়তো এই কথা বলে ফেলেছিলেন কিন্তু তিনিও জানতেন তা সম্ভব নয়। কারণ লিগ চালানোর খরচ পাবে কোথায়? এমনিতেই ঋণের বোঝায় ভাসছে ফেডারেশন। এতটা খারাপ অবস্থা যে কর্মচারীরাও নাকি ঠিকমতো বেতন পান না। এ অবস্থায় বিনা স্পন্সরে লিগ করে ঋণের পাহাড় বানাবে কি? বাফুফের ভাগ্য ভালো বলতে হয় শেষ পর্যন্ত সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদেরই প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে স্পন্সর করছে। তা না হলে লিগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ত। শুধু পেশাদার লিগ নয়, সাইফ পাওয়ার টেকের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন বিপর্যয়ের সময় তিনি যেভাবে ফুটবলের পাশে আছেন তা ভাবাই যায় না। তারা সরে গেলে ফুটবলে করুণ দশা নেমে আসত। স্পন্সরশিপেই লিগ মাঠে গড়াচ্ছে এ নিয়ে বাফুফেতে স্বস্তি এসেছে। আসা যাক ভেন্যু প্রসঙ্গে। এবারও লিগ সীমাবদ্ধ থাকছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তবে অধিকাংশ ম্যাচই হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পর্বের ম্যাচ এখানেই। তাও আবার প্রায় প্রতিদিনই দুটি করে ম্যাচ। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কি পরিণতি হবে তা কি লিগ কমিটি ভেবে দেখেছে। প্রথম পর্বে মাত্র চারটি ম্যাচ হবে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে।
অথচ প্রতিবছরই বাফুফে ভেন্যু বাড়ানোর কথা বলে। স্পন্সরশিপ প্রতিষ্ঠান বলেছে ভেন্যু বাড়ালে তারা ৪ কোটি টাকা দিত। এখন সেখানে দেবে মাত্র দেড় কোটি। এর জন্য দায়ী কে? ঢাকার বাইরে লিগ হলে ফুটবল ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হতো। খেলোয়াড়দের অবনতির পেছনে এটাও বড় কারণ। ১০ বছরেও পেশাদার লিগে পেশাদারিত্ব আনতে পারেনি বাফুফে। জোড়াতালি দিয়েই লিগ হচ্ছে। ধন্যবাদ দিতে হয় ক্লাবগুলোকে। তারা এ অবস্থাতেই কোটি কোটি টাকা খরচ করে দল গড়ছে। ফুটবল তো বেঁচে আছে ক্লাবগুলোর কারণেই।