অবকাঠামোয় ব্যয় কমাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

Slider টপ নিউজ

base_1499967582-privet-univarsitiবেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। ২০১৪ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পরের বছরই এ ব্যয় কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬২ লাখ টাকায়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি ব্যয়ের কথা থাকলেও উল্টো কমিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মতোই অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমাচ্ছে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয় করেছিল মোট ৪৪২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে এসে এ বাবদ তারা ব্যয় করেছে ৪৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাত্ এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ ব্যয় কমেছে ৯ কোটি টাকা।

বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯৬টি। প্রতি বছরই বাড়ছে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যয়। ব্যয়িত এ অর্থের বড় অংশ চলে যাচ্ছে ভবন ভাড়ার মতো অনুত্পাদনশীল খাতে। এর বিপরীতে অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণা, প্রকাশনা, বই সংগ্রহ ও শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগের মতো শিক্ষার মানোন্নয়নমূলক খাতগুলো থেকে যাচ্ছে অবহেলিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চশিক্ষা প্রসারের নামে গত কয়েক দশকে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ সুযোগে অনেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেরই স্থায়ী কোনো ক্যাম্পাস নেই। ফলে ভাড়া করা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে এ খাতে।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়াকে অবকাঠামো ব্যয় কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে মাত্র ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে ১৬টি, ফাউন্ডেশনের জমিতে ক্যাম্পাস করেছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে। কম জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন, দেশের হাতেগোনা দু-চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশেরই তা নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক ব্যয়ের অধিকাংশ অর্থ খরচ হচ্ছে অনুত্পাদনশীল খাতে। গবেষণা ও বই কেনাসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে খরচ হচ্ছে কম। ভাড়া ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ফলে আয়ের বড় একটা অংশ ভাড়া ও মেইনটেন্যান্স বাবদ ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া খণ্ডকালীন শিক্ষক বেশি হওয়ার কারণেও ব্যয় বাড়ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস ও শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ালে এ বাবদ খরচ কমবে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট ব্যয় ছিল ২ হাজার ৫৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে সময়ের অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যানুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়প্রতি গড় ব্যয় ছিল ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় ছিল সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ। আর শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় ছিল সর্বনিম্ন। ২০১৪ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয় ছিল ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়প্রতি গড় ব্যয় দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাত্ এক বছরের ব্যবধানে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। মোট হিসাবে এক বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

এদিকে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়মিত ইউজিসিতে জমা দিচ্ছে না। যদিও প্রতি শিক্ষাবর্ষের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি অর্থে পরিচালিত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা সরকারি উদ্যোগে করা হয়। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের (সিএ ফার্ম) মাধ্যমে নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দেয়ার কথা। প্রতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন হালনাগাদ রয়েছে মাত্র আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কার্যক্রম পরিচালনাকারী বাকি অর্ধশতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিরীক্ষা প্রতিবেদন হালনাগাদ করে ইউজিসিতে জমা দেয়নি। প্রথম সারির অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এর মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *