আপাতদৃষ্টিতে রীতিমতো সাজগোজ করা আকর্ষণীয় চেহারার তরুণী। শুধু মুখের উপর ‘নকাব’-এর মতো একটি আড়াল। সেই ঢাকনার ভিতরে যে সত্য লুকিয়ে ছিল, তার হদিশ পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররাও। বিহারের পটনার ঘটনা। মঙ্গলবার দুপুরে সমস্তিপুর এলাকার বাসিন্দা ডাক্তার-দম্পতি কুমার হেমন্ত এবং তাঁর স্ত্রী শীকলা তাঁদের চেম্বারে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। এমন সময়ে দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। শশীকলা দরজা খুলে দেখলেন, এক তরুণী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পরণে সুন্দর সালোয়ার-কামিজ, চেহারায় একটা মার্জিত ভাব। তবে মুখটা ওড়না দিয়ে ঢাকা। শশীকলা ভাবলেন, কোনও অভিজাত মুসলমান পরিবারের মেয়ে বোধ হয় তাঁদের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন। তরুণী জানালেন, তিনি পেটের যন্ত্রণায় অত্যন্ত কাতর।
ডাক্তার হেমন্তের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ চান। ব্যথার তীব্রতা এতটাই বেশি যে, ডাক্তারখানা পর্যন্ত যাওয়ার ধৈর্যও তাঁর ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ডাক্তারের বাড়িতেই চলে এসেছেন তিনি। শশীকলা সহানুভূতি বোধ করলেন তরুণীর প্রতি। তাঁকে বাইরের ঘরে বসিয়ে রেখে ভিতরের ঘরে স্বামীকে খবর দিতে চলে গেলেন। কিন্তু ভিতরের ঘরে স্বামীর খোঁজে যাওয়ার পরেই শশীকলার কানে বাড়ির শোওয়ার ঘর থেকে খুটখাট শব্দ ভেসে আসে। কৌতূহলী শশীকলা শোওয়ার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখতে পান, বাইরের ঘরে অপেক্ষারত তরুণী কখন যেন শোওয়ার ঘরে ঢুকে এসেছেন। বাড়ির আলমারি খুলে গয়নাগাটি হাতানোর চেষ্টা করছেন। স্বামীর সাহায্য নিয়ে তরুণীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন শশীকলা।
খবর যায় স্থানীয় হলসিংহ সহায় থানায়। ধৃত এক জন মহিলা শুনে মহিলা-পুলিশদের পাঠানো হয়। তাঁরা ধৃত তরুণীকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যান। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই এক পুলিশ কর্মীর সন্দেহ হওয়ায় তিনি সরিয়ে দেন ধৃতের মুখের ওড়না। আর তার পরেই চোখ কপালে ওঠে থানাসুদ্ধ সমস্ত পুলিশের। দেখা যায়, ধৃত ব্যক্তি এক জন পুরোদস্তুর পুরুষ। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই সমস্ত বিষয়টি স্পষ্ট। জানা যায়, ধৃতের নাম পবন কুমার। মহিলার বেশ ধারণ করে লুঠপাট চালানোই তার পেশা। এর আগেও বহু জায়গায় এই কায়দায় লুঠপাট চালিয়েছে সে। মহিলার বেশে সজ্জিত হয়ে চুরি-ডাকাতি করার কিছু সুবিধাও পেত পবন। প্রথমত, নিজের পরিচয় গোপন রাখা যেত। দ্বিতীয়ত, কোনও কারণে ধরা পড়লে মহিলা হিসেবে মানুষের সহানুভূতিও মিলত। ডাক্তার দম্পতির বাড়িতে ধরা পড়ে গেল সেই ধুরন্ধর পবনই।