আর কত নির্যাতিত হবে সাংবাদিক ?

Slider খুলনা বিনোদন ও মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

Photo -1

 

 

 

 
এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ : সারা দেশে যখন একের পর এক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটছে তখন সাংবাদিকরাও বাদ যাচ্ছেন না। স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে যদি একের পর এক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটে কিংবা সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন তাহলে এর চেয়ে হতাশাজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? সাম্প্রতি গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলায় চ্যানেল-২৪ এর সাংবাদিক রাজীব আহম্মেদ রাজু গুরুতর আহত হয়েছেন। এর আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পৌর মেয়রের গুলিতে নিহত হন দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল আর তার মৃত্যুর খবর শুনে শোকাহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন নিহতের নানী রোকেয়া বেগম। সাংবাদিক শিমুল হত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিষয়টি উদ্বেগজনকও। এমন ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ শঙ্কিত না হয়ে পড়ে না।এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা যারই পৃষ্টপোষকতা পাক না কেন তাদের কোন ছাড় দেয়া সরকারের সমচিন হবে না। সাগর-রোনির হত্যাকান্ডের কথা মানুষ ভূলেনি এবং বিচারও পায়নি। আর বিচার হয়নি বলেই সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না।সাংবাদিক শিমুল হত্যার প্রতিবাদে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় প্রতিবাদ ও মানব বন্ধন হয়েছে এবং হচ্ছে কিন্তু কে শুনে কার কথা। মানববন্ধনে বলা হয়, সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হামলা ও খুনের শিকার হচ্ছেন। অবিলম্বে এসব হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এসময় বক্তরা অবিলম্বে সাংবাদিক শিমুলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও জানিয়েছেন।
গত ১০ বছরে দেশ-বিদেশে মোট ৮২৭ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ সালেই নিহত হয়েছেন ২১৩ জন। সবচেয়ে বেশি ৭৮ জন খুন হয়েছেন আরব বিশ্বে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক হত্যার শিকার হন। আর এসব হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে সাংবাদিকদের অনৈক্য। সম্প্রতি ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেলের ‘সেফটি অব জার্নালিস্টস অ্যান্ড দ্য ডেনজার অব ইমপিউনিটি’ শীর্ষক এক গবেষণায় প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে আসে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে কোন এলাকায় একটা বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এই সময় সাধারণত পাবলিক কি করবে? তারা নিজেদের জীবন রক্ষার্থে স্থান ত্যাগ করবে কিন্তু সেই জায়গায় একজন সাংবাদিক কি করবে সে কিন্তু স্থান ত্যাগ করবে না। সে চেষ্টা করবে একটি সংবাদ তৈরি করতে কিন্তু অপরাধী সাংবাদিক দেখে অপরাধ করবে না। কিন্তু আজকাল তা ভিন্ন চেহেরা দেখা যাচ্ছে কোন অপরাধীর চিত্র তুলতে গেলে সাংবাদিকদের হামলা করা হয়। শুধু তাই নয় সাংবাদিকেরা তাদের জীবন ও দিয়ে দিচ্ছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়,শুধু পুরুষদের ক্ষেত্রে নয়, নারীদের ওপরও হামলা বাড়ছে নিয়মিত ভাবে। ২০১৫ সালে ৯ নারী সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। গত দশকে গড়ে চারজন নারী সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৮২৭টি হত্যাকান্ডের মধ্যে মাত্র ৫৯টি দেশ ৪০২টি হত্যা মামলার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৩টি। তদন্ত চলছে ৩৩৯টির। আর ৪২৫টি মামলার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো কোনো তথ্যই দেয়নি। সব মিলিয়ে সাংবাদিক হত্যায় বিশ্বব্যাপী ৯২ ভাগ মামলার নিষ্পত্তি হয় না।
সাংবাদিক মানে জাতির কন্ঠস্বর।কৃষক যেমন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল উৎপাদন করে, ঠিক তেমনি নিজেরা তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সমাজের অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করে দেশ ও জাতির কাছে। শুধু তাই নয় তারা নিজেদের পরিশ্রমে চেষ্টা করে সমাজের অপরাধ অনিয়ম তুলে ধরতে। ফলে সমাজ অনেকটাই উন্নত হয় মানুষ তাদের নিজেদের অধিকার ফিরে পায় বা অধিকার আদায়ে সোচ্চার হন। কিন্তু তাতে কি পান সাংবাদিকেরা। শুধু জনতার সাধুবাদ ও নিজের সামান্য স্বস্তি। দেশে প্রতিনিয়ত সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলছে। এতে করে সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আগেও অনেক সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এ ধরণের সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তারা। প্রশ্ন হলো সাংবাদিকদের উপর কেন একর পর এক হামলা ঘটনা ঘটছে? কোনো সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে অব্যহত সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনো খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। প্রকশ্যই সিরাজগঞ্জে মেয়রের গুলিতে সাংবাদিক হাকিম খুন হন। রাজধানী সহ সারা দেশের সাংবাদিকরা প্রতিবাদি হওয়ায় পরে পুলিশ মেয়র মেয়র হালিমুল হক মিরুকে ধরতে বাধ্য হয়। প্রশ্ন হলো গুলিতে সাংবাদিক নিহত হলো আর আসামিকে ধরতে গোটা সাংবাদিক সমাজকে আন্দোলন করলে তবেই তাকে ধরা হলো। এইতো হচ্ছে অবস্থা। ঘটনা ঘটিয়ে পার পেলে যা হয় তাই হচ্ছে। দেশে সাংবাদিক হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিনের পর দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।ফলে সাংবাদিকতা পেশা ক্রমাগতই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথাগত দুঃখপ্রকাশ ও হামলাকারীদের শাস্তির আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সাংবাদিকদের পেশায় এ চলমান ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্র কি কোনো উদ্যোগ নেবে? সাংবাদিক সমাজের জন্য দূর ভবিষ্যতে কি কোনো উজ্জ্বল আলো অপেক্ষা করছে? বিশ্বের যেসব দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাংবাদিক খুন হয় আর তার বিচার হবে না তা কী করে হয়? পরিসংখ্যানটি আঁতকে ওঠার মতো। গত দেড় যুগে ৫১ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ৫৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটিতে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে সাংবাদিক হত্যাকান্ডের একটি ঘটনার সঠিক বিচার হয়নি। খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা নিজেরাই খবর হচ্ছেন। প্রতি বছরই একাধিক সাংবাদিকের অপঘাতে মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু সারা জীবন সত্যের পেছনে ছুটে বেড়ানো এসব সাংবাদিকের হত্যা রহস্য হিমশীতল বরফের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। শুধু বিচারই নয়, একটি হত্যাকান্ডেরও রহস্য প্রকাশিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাপন করছে স্বাভাবিক জীবন। কেউ কেউ রয়েছে জামিনে। কেউ আবার মিডিয়াতেই কর্মময় জীবনযাপন করছে। অনেক হত্যাকান্ডের বিচারকার্য এমনকি তদন্তকাজ, চার্জশিট ঝুলে আছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এ দীর্ঘ সময়ে সাংবাদিক হত্যারও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার দায় কোন সরকারই এড়াতে পারবে না। বাংলাদেশেও ১৯৯২ সাল থেকে অধ্যাবদি নিহত ২০ সাংবাদিক পরিবারের অধিকাংশই বিচার পায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ সাংবাদিকদের অনৈক্য। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারলে এসব হত্যাকান্ড চলতেই থাকবে, বিচার হবে না। এছাড়াও দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠা, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার দুর্বোধ্যতা, যোগ্য লোকের অভাব, বিভিন্ন উদ্দেশ্য থাকা, বিচারক সংকট অন্যতম। তাই নিজেরা ঐক্যবদ্ধ না হলে সাংবাদিক নির্যাতন চলতেই থাকবে। শুধু সংগঠন থেকে নয়, এসবের প্রতিবাদ একজন সাংবাদিক পেশাগত জায়গা থেকেও করতে পারেন। নিজেদের নৈতিকতা, সাহসিকতা দিয়ে ধারাবাহিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেটি নিজের নয়, পেশার সম্মানেই করা উচিত বলে মনে করেন আলোচকরা
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ, আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো দূরে থাক, কোন সাংবাদিক হত্যাকান্ডেরই বিচার হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে হরদম। সরকারকে এসব হত্যাকান্ডের বিচারে অবশ্যই আন্তরিক ও কঠোর হতে হবে। মাছরাঙা টেলিভিশন ও এটিএন বাংলার সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও আলোচনায় চলে এসেছে। কোন একটি মামলার বিচারকার্য আজ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। ফলে তারা সাংবাদিকদের বাসগৃহে প্রবেশ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার মতো স্পর্ধা দেখাতেও পিছ-পা হচ্ছে না। আমরা চাই, দেশে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক। এটি একটি দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। এখন আর মুখের কথায় কেউ আস্থা স্থাপন করতে চায় না। সাংবাদিক নির্যাতন আর হত্যাকান্ড নিয়ে কোন টালবাহানা দেশের জনগণ ও সাংবাদিক মহল মেনে নেবে না। তাই সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ও বাস্তবিক পদক্ষেপ নিয়ে অতি সত্বর মূল অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করবে এটাই আমরা বিশ্বাস করি। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সংবাদপত্র, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা বিষয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। সাংবাদিক মানেই ধান্ধাবাজ, প্রতারক, বন্ট্যাক মেইলার ও ভীতিকর কোনো প্রাণী, এমন ধারণাই পোষণ করে দেশের গরিষ্ঠ মানুষ। প্রকৃত সাংবাদিকরা এর কোনটাই নন। সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। এটা কেবল পেশা নয়, একজন সাংবাদিক এ সেবায় থেকে মানুষকে সেবা দিতে পারেন। দেশের কতিপয় অসৎ সম্পাদক, সাংবাদিক অর্থের বিনিময়ে সারাদেশে নানা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র দিয়ে এ পেশার সম্মান হানি করেছে। এরা সাংবাদিক নন। সাংবাদিক নামধারি। এদের কতকের কারনে সাংবাদিকতা যে একটি অনন্য পেশা তা দেশের অধিকাংশ মানুষ জানে না। এখনও সংবাদপত্র জনগনের কথা বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বলেই দেশের মানুষ অনেকটা শান্তিতে আছেন। সৎ সাংবাদিকতার জায়গাটা বিলুপ্ত হলে দেশে দুর্ভোগ নেমে আসবে। একটি সংবাদপত্র আতœ প্রকাশের সঙ্গে সারা দেশের হাজার হাজার সাংবাদিকের ঘাম-শ্রম ও জীবনঝুঁকি জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমহীন কাজ করতে হয় অনেক সংবাদকর্মীর। অনেকটা নিশাচরের ভূমিকা তাদের।
সাংবাদিকদের পারিবারিক জীবন বলতে কিছু নেই। কিন্তু কিছু অসৎ এবং ভুয়া সাংবাদিকদের কারনে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন সমাজে নেই বললেই চলে। পাশাপাশি নিরাপত্তাঝুঁকিতো রয়েছেই। সমাজের অনেক সাংবাদিক ত্যাগী, নির্লোভী ও সৎ। তারা মানবকল্যাণে, সমাজকল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন। এই দিকটিও সরকারকে আমলে নিতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যা বন্ধ করা না গেলে সৎ, মেধাবী, যোগ্য, তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এখন যে সংবাদপত্রে ঢুকছেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এমনিতেই সাংবাদিকদের পেশাগত নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা নেই, তার ওপর যদি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তাদের জীবনঝুঁকি বেড়ে যায় কিংবা তারা হামলা-হত্যার শিকার হন তাহলে কিভাবে সাংবাদিকতা পেশা বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই এবং এর কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি রাজধানী সোয়ারিঘাটে যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার শাকিল হাছান ও ক্যামেরা পার্সন শাহিন আলম কে অবৈধ পলিথিন কারখানার মালিক কতৃক কেরোসিন দিয়ে তাদের পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা সাংবাদিক নিরাপত্তা নিয়ে আরেকবার ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন যেখানে সাগর রুনি হত্যাকান্ডের এখনো অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে। টেকনাফে ৫ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছিল ইয়াবা ব্যাবসায়ী। এই ছাড়া দিন দিন সাংবাদিক নির্যাতনের অসংখ্য নজির সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ একদিন দুর্বৃত্তের হাতে চলে যাবে। শুধু তাই নয় গনমাধ্যম ও যাবে হুমকির মুখে। কাজেই এখনই সরকার বা বেসরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়।সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার হলে অবশ্যই দেশ উন্নত হবে মানুষের অধিকার রক্ষা পাবে। প্রিয় মাতৃভুমি সোনার বাংলা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে
বর্তমান বিশ্ব ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নখদর্পণে। তাই মুহূর্তের মধ্যে সংবাদ চলে আসে জনসাধারণের দোরগোড়ায়। আর এসব সংবাদ পৌঁছে দিতে প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের সর্বোচ্চ মেধা, শ্রম, দায়িত্ব ও আন্তরিক সেবা বিনিয়োগ করেন। এসব তথ্য ও অসঙ্গতি তুলে ধরে যেমন দেশের নাগরিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করে তোলেন, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদেরও বাধ্য করেন সঠিক পথ অনুসরণ করে সঠিক কাজটি করতে। এর ফলে অনেক সাংবাদিকই হয়ে ওঠেন অশুভচক্রের চক্ষুশূল। সংবাদ সংগ্রহ ও উপস্থাপনকারীর জীবন হয়ে ওঠে বিপন্ন। তবু প্রাণের ঝুঁকি জেনেও কখনও তারা থেমে থাকেন না দায়িত্ব পালনে।যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে সত্যের সন্ধানে ছুটে চলেন দেশ-বিদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত। যুদ্ধ, অগ্নিকন্ড, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক, ঝড়-তুফান কিংবা মাদক বা সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায় ভয়াবহ বিপদ মাথায় নিয়ে ঢুকে পড়েন।একজন সৎ সাংবাদিক বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন অন্তরালের অনেক অজানা তথ্য। উদ্ঘাটন করে নিয়ে আসেন ঘটনার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা গূঢ় রহস্য।কিন্তু এর কোনোটাই একেবারে সহজসাধ্য কোনো কাজ নয়। এসব কাজে যেমন আছে সম্মান, তেমনি আছে মারাত্মক ঝুঁকিও। তাই আমরা বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের নানাভাবে প্রতিপক্ষের জিঘাংসার শিকার হতে দেখি। নির্যাতিত ও নিপীড়িত হতে হয় তাদের। অবস্থাদৃষ্টে অকপটে বলতে হয়, আমাদের দেশের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত দেড় দশকে একজন সাংবাদিক হত্যারও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। বিএনপি, আওয়ামীলীগ, তত্ত্বাবধায়ক কোনো সরকারই এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। আমরা সাংবাদিক হত্যাকান্ড এবং নির্যাতনের সব মামলার দ্রুত নিস্পত্তি চাই। সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল দাবি করেছে গণমাধ্যমের সকল স্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। তাঁদের এ দাবি দেশ ও জাতির মঙ্গল বয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস।
ঝুঁকির মুখে সাংবাদিকতা
বিচারহীনতায় কমেনি সাংবাদিক নির্যাতন,
বিভিন্নভাবে সাংবাদিক নির্যাতন,
সাংবাদিকের পরিবার অর্থ সংকটে,
বিশ্বে ৯০ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হয়নি,
মুক্ত সাংবাদিকতার ঝুঁকি বাড়ছে,
শেষ কথা: সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। জাতির বিবেক। প্রতিদিন সংবাদ পিপাসু মানুষের দ্বারে নতুন নতুন খবর নিয়ে হাজির হয় সাংবাদিকরা। তাদের লেখনি বা সংবাদ উপস্থাপনের মাধ্যমে সকালে চায়ের কাপে ঝড় থেকে শুরু করে মানুষ সুফল পেতে শুরু করে। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রস্থাল হিসাবে সাংবাদিকদের দারস্থ হয়। আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সুখ,দুঃখ,হাসি কন্না,সাফল্য ব্যার্থতার কথা। কিন্তু সেই সাংবাদিক যখন নির্যাতিত হয় তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *