মানুষ যেন অহেতুক নির্যাতনের শিকার না হয়

Slider জাতীয় সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

63188_f2

 

 

 

 

 

 

 

র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়, তারা যেন কোনো রকম অহেতুক নির্যাতনের শিকার না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করাই আপনাদের মূল লক্ষ্য। আইন-কানুন এবং নিয়মনীতি মেনে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। রাজধানীর কুর্মিটোলায় এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত দরবারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি  এসব কথা বলেন। র‌্যাব সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনারা একটি শৃঙ্খলা-বাহিনীর সদস্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৈতিক স্খলন যেকোনো বাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেয়। মনে রাখবেন, জনগণের পয়সায় আমাদের-আপনাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। আমরা সবাই জনগণের সেবক। সেই জনগণ যেন কোনোভাবেই নিগৃহীত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। র‌্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, পুলিশের আইজিপি মো. শহীদুল হকসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদর দপ্তরে এসে পৌঁছলে মেজর মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে র‌্যাব ফোর্সেস অনার গার্ড প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা না থাকলে দেশে বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। বিগত ৮ বছর ধরে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজ আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, এ বাহিনীর নতুন নতুন ব্যাটালিয়ন উদ্বোধন করা হয়েছে। র‌্যাবের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। র‌্যাব সদরদপ্তর এবং র‌্যাব ট্রেনিং স্কুলসহ সকল ব্যাটালিয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। র‌্যাব সদরদপ্তর, র‌্যাব-১৩ এবং ১৪ ব্যতীত সব ব্যাটালিয়নের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ একনেক-এ অনুমোদিত হয়েছে। ২০১৫ সাল  থেকে এ পর্যন্ত র‌্যাব-এর বাজেট প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। অপরাধী শনাক্ত করতে র‌্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীতে অস্পষ্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ, টেলিফোন সেট ট্রাকিং-এর যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। র‌্যাবের অপারেশনাল শক্তিবৃদ্ধি করতে দুটি  হেলিকপ্টারসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন বরাদ্দ দিয়েছি আমরা। ফলে, র‌্যাব জল, স্থল ও আকাশপথে দ্রুত অভিযান কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পরিণত হয়েছে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে। র‌্যাব সদস্যগণ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। র‌্যাবের অভিযানের সাফল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমপ্রতি সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলকে দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে র‌্যাব বিস্ফোরকমুক্ত করে যথাযথ কর্তৃৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অভিযান পরিচালনার সময় নিহত র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। এছাড়া র‌্যাবের দায়িত্ব পালনকালে নিহত দেশপ্রেমিক সদস্যদের সবার তিনি রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি দমনেও র‌্যাব কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চরমপন্থিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। র‌্যাব তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র। তিনি বলেন, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে- এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে র‌্যাব কার্যকর অভিযান পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি মাদক পাচার প্রতিরোধ এবং এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অপহৃত শিশু ও ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশীয় অসাধু ব্যবসায়ীর পাশাপাশি বিদেশি চোরাচালানি, জাল মুদ্রা ও পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী এবং অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব বৃদ্ধিতে এই বাহিনীর অবদানকেও তিনি স্মরণ করেন। র‌্যাবের জননিরাপত্তায় হুমকি ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভেজালবিরোধী অভিযানের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। সুন্দরবনে আত্মসমর্পণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই আত্মসমর্পণের পরে সুন্দরবন এখন একটি নিরাপদ জনপদ এবং তারা সেখানে জীবন-জীবিকা করেও খাচ্ছে। তারা যেন এই ভুল পথে আর না ফেরে সে জন্য সব রকমের সাহায্য এবং জীবন-জীবিকার সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে একটি নতুন উপদ্রব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। র‌্যাব সমপ্রতি ‘কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এ পুস্তক ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নিন। সরকার প্রধান বলেন, তিনি নিজেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব জেলার সাধারণ মানুষ, ইমাম, স্কুল শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করতে হবে। তা না হলে আমাদের সব অর্জন বিনষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে এবং প্রতিকার নয়, প্রতিরোধের দিকেই বেশি নজর দেয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে র‌্যাব ফোর্সের বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা এবং র‌্যাব স্পেশাল ফোর্সের ওপর অনুষ্ঠানে দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে সুন্দরবনে র‌্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়েও একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব-৯ এর জন্য নবনির্মিত হেডকোয়াটার্স ভবনের ফলক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, অপরাধ ও জঙ্গিদমনে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশের র‌্যাব ইউনিট গঠন করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার সদস্যদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থি দমনসহ সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি দমনে র‌্যাব কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
হাওর পরিস্থিতি দেখতে সুনামগঞ্জ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
সুনামগঞ্জ হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী রোববার সুনামগঞ্জ সফরে যাচ্ছেন। সফরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সুনামগঞ্জে আসার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০শে এপ্রিল সুনামগঞ্জ সফরে যাবেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ত্রাণসহায়তা বিতরণ করবেন। এছাড়া তিনি একটি জনসভা করবেন। তবে কর্মসূচির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আলোচনা চলছে। এখনো সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি।  প্রধানমন্ত্রীর সুনামগঞ্জ যাওয়া উপলক্ষে গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এর আগে গত ১৭ই এপ্রিল সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তিনি সুনামগঞ্জে একদিন অবস্থান করে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন এবং জেলার বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *