পরোপকার মানবতার অলংকার

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

 

10917893_1586310234843177_2785436532876773338_n

 

 

 

 

 

অনুসন্ধান প্রতিবেদন :

এম আরমান খান জয় : পরোপকার মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার। পরোপকার না থাকলে সমাজের স্থিতিশীলতা থাকে না। সমাজে একের পর এক অন্যায়, অত্যাচার, প্রবঞ্চনা আর খুনখারাবির মতো মন্দ কাজ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে যেভাবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তেমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ বিষয়ে দয়ার প্রতিচ্ছবি বিশ্বনবীর ঘোষণা হলো, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক তোমাদের প্রতি সদয় হবেন। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘সধহ পধহহড়ঃ ষরাব ধষড়হব’ মানুষ সমাজ ছাড়া চলতে পারে না। আর সমাজে বসবাস করতে হলে মানুষকে সামাজিক হতেই হয়। মানুষকে সামাজিক হতে হলে পরোপকারের বিকল্প নেই। একজন অন্যজনের বিপদে এগিয়ে আসা, পাশে দাঁড়ানো, সহমর্মিতা প্রকাশ করা, নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। এ বিষয়ে একটি প্রবাদ আছে ‘ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। ’ কবির কণ্ঠে তা এভাবে ফুটে উঠেছে‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও। ’
পরোপকারী হতে হলে অনেক ধন-সম্পদের মালিক হতে হবে এমন ধারণা অমূলক। বরং ইচ্ছাটাই এখানে মূল প্রতিপাদ্য। প্রত্যেক মানুষই তার নিজ নিজ অবস্থানে থেকে পরোপকারী হতে পারে। কেননা পরোপকার নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। পরোপকার অনেক ধরনের। পরোপকারী হতে পারে ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে। হতে পারে শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক কর্মকান্ডের। আমাদের চারপাশে কত রকম মানুষের বসবাস! তাদের জীবনে রয়েছে নানা সমস্যা। তাদের সেই সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াও তো পরোপকার। এই যে আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটি বিরাট অংশ সর্বনাশা নেশার জগতে ডুবে আছে, তলিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে, তাদের সেই অন্ধকারের গলিপথ থেকে বের করে আলোকিত পৃথিবীতে নিয়ে আসাও পরোপকার। বরং এ কাজের জন্যই আমরা ‘মানুষ’ হয়েছি। হয়েছি শ্রেষ্ঠ জাতিতে ভূষিত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০) পরোপকার মানুষকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন পরহিতৈষী। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন পরোপকারীর মূতর্ প্রতীক। মানুষের উপকার করে তিনি আনন্দিত হতেন। অন্যের বেদনায় ব্যথিত হতেন। কারো চোখে পানি দেখলে নিজের চোখকে ধরে রাখতে পারতেন না। টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ত তাঁর অশ্রু মুবারক। পক্ষান্তরে যারা তাঁকে কষ্ট দিত, তিনি তাদের ঔদার্যের সঙ্গে ক্ষমা করে দিতেন। সেই বেদুইন বুড়ির গল্প কে না জানে! যে কিনা দিনের পর দিন রাসুল (সা.)-এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিত। যেন রাসুল (সা.) কষ্ট পান। কিন্তু রাসুল (সা.) এ নিয়ে কারো কাছে কোনো অভিযোগ করতেন না। বরং নিজ হাতে তা সরিয়ে দিতেন আর মুচকি হাসতেন। আমাদের ভেবে দেখা দরকার, কেন আমাদের সমাজ আজ এত হিংসা ও নৈরাজ্যের আঘাতে জর্জরিত? এর উত্তর একটাই আর তা হচ্ছে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া। সে কারণেই অপমৃত্যু হচ্ছে মানবিকতার। আমরা ভুলে গেছি যে আমরা মানুষ। মনুষ্যত্ব আমাদের বৈশিষ্ট্য। তাই সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর থেকে উত্তরণের পথ ওই একটাই। আর তা হচ্ছে ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করা।
আত্মসুখ বা আত্মভোগে কোনো মহত্ব নেই। পরোপকারেই প্রকৃত সুখ। আর এই পরোপকার শুধু পরের জন্যই নয়, বরং এই পরোপকারের মাধ্যমে নিজেরও অনেক কল্যাণ সাধিত হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘অবশ্যই দান-সদকা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায়। মানুষের কাছ থেকে অহংকার ও অহমিকা দূর করে দেয়। ’
তাই আসুন আমরা সবাই পরোপকারী হই। পরের বিপদে পাশে দাঁড়াই। অন্যের প্রয়োজনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করি। কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে মোরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *