ফেসবুক বন্ধের প্রক্রিয়ায় হ-য-ব-র-ল

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

61903_fb

 

ঢাকা; জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নজরদারি শুরু করেছে বাংলাদেশে। ৪ দিন আগে থেকে শুরু হওয়া এ নজরদারিতে এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে অনেক আইডি। ভুয়া আইডি বন্ধের এ প্রক্রিয়ায় সাধারণ অনেক ব্যবহারকারীর আইডিও বন্ধ হয়ে গেছে। তারা উপায় খুঁজছেন নিজের ফেসবুক পেজ ফিরে পেতে। আবার অনেকে ফেসবুকে নিজের আইডির প্রমাণপত্র দিয়ে ৭২ ঘণ্টার হিসাব গুনছেন। ফেসবুক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়া অনেকেই এ নিয়ে আছেন অস্বস্তিতে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেক আইডি বন্ধ করার মতো ভালো কাজ করতে গিয়ে কিছু মানুষের হয়তো সমস্যা হচ্ছে, তবে তা সাময়িক। বন্ধ হয়ে যাওয়া আইডির গ্রাহকরা এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন। তাদের যুক্তি, ফেক না হয়েও কেন আমাদের ফেক হিসেবে চিহ্নিত করা হলো? কোন্‌ মাপকাঠিতে ফেসবুক তাদের পেজ বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু রিয়েল আইডি বন্ধ হলেও বাংলাদেশের অনেক ফেক আইডি এখনো বন্ধ করেনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গতকাল সারাদিন ফেসবুক পর্যবেক্ষণে এ চিত্র দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অনেক রাজনীতিবিদের নামে শ’ শ’ ফেক আইডি চালু থাকতে দেখা গেছে। এসব পরিচিত মুখের পাশাপাশি অনেক বিকৃত নামে খোলা ফেক আইডিও রয়েছে সচল। সব মিলিয়ে গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে ফেসবুক নিয়ে তৈরি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এদিকে বাংলাদেশে ফেসবুক আইডি বন্ধ নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের কতটি আইডি গত কয়েক দিনে বন্ধ করেছে তার কোনো হিসাব তাদের কাছে নেই। এ নিয়ে ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগও করা হয়নি। তাই আসল ফেসবুক আইডিদের ভোগান্তির কথা এখনো জানে না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ গতকাল বলেন, ফেসবুক যা করছে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। বাংলাদেশের অনুমতি নিয়ে তারা কিছু করছে না। ফেসবুকের নিজস্ব মানদণ্ডে যেসব আইডি ফেক মনে হচ্ছে সেগুলোই কেবল বন্ধ করছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কতটি আইডি বন্ধ করা হয়েছে তার কোনো তথ্য বিটিআরসি’র কাছে নেই। আরো কতগুলো বন্ধ করা হবে তাও জানি না। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেবল ভিভিআইপিদের ফেক আইডি বন্ধের জন্য ফেসবুকের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই সংখ্যা মাত্র ৬০টি। এই আইডিগুলোর বিপরীতে ইউআরএল পাঠানো হয়েছে। ফেসবুক সেগুলো ভেরিফায়েড করে দেবে। তাহলে ওইসব আইডির বিপরীতে যেসব ভুয়া আইডি আছে সেগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে। ফেসবুক একই সঙ্গে বিশ্বের চারটি দেশে শুদ্ধিকরণ অভিযান শুরু করেছে। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি তিনটি দেশ হলো- ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ফেসবুক এ অভিযান চালাবে। ওদিকে ফেসবুক নিয়ে এ ধরনের হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ভুয়া মেসেজ আদান-প্রদান। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নামে ওই মেসেজ দেয়া হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, ফেসবুকের অসংখ্য ব্যবহারকারীর কারণে এর গতি ধীর হয়ে পড়েছে। অনেক অকার্যকর আইডি’র কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই আপনি যদি ফেসবুকে সক্রিয় থাকেন তাহলে ২ সপ্তাহের মধ্যে এই বার্তা ফেসবুকের মেসেন্‌জারের মাধ্যমে অন্তত ২৫ জনকে পাঠান। তা না হলে আপনার আইডি নিষ্ক্রিয় বিবেচনা করে বন্ধ করে দেয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজে এ ধরনের কোনো বার্তা নেই। এদিকে ১৬ই এপ্রিল সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের জানান, সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের ভুয়া পেজ ও অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ফেসবুক। আমাদের পাওয়া বিভিন্ন ফেইক আইডিগুলো আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি, ওগুলো বন্ধের কাজ চলছে। তারা (ফেসবুক) নিজ উদ্যোগেও কিছু করছে। আমরা যেগুলো পাঠিয়েছি সেগুলো শুধু ভিআইপিদের। তারপরও আমরা বলেছি অন্য ফেক আইডিগুলোও দেখতে হবে। দেশের ভিআইপি ও সংসদ সদস্যদের নামে খোলা ভুয়া ‘ফেসবুক পেজগুলো’ শিগগিরই বন্ধ করে দেয়া হবে বলে গত ১০ই এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। সংসদ সদস্য ও ভিআইপিদের পেজগুলো ‘ভেরিফায়েড’ হয়ে গেলে তাদের নামে থাকা অন্য পেজগুলো ‘ভুয়া হিসেবে’ চিহ্নিত হবে বলে সে সময় জানান তিনি। ৩০শে মার্চ সিঙ্গাপুরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া অ্যাকাউন্টের কারণে সমালোচিত হয়ে আসছে ফেসবুক। এ ধরনের সমালোচনা এড়াতে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে বেশ কয়েকদিন ধরে বেশ সক্রিয় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ভুয়া অ্যাকাউন্ট চিহ্নিতকরণের পদক্ষেপ নেয়া হলো। সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তালিকায় ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় শহর হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরপরই ভুয়া আইডি বন্ধ হওয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে গেল এই শহর। গত দু’দিন ধরে দেশে অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারীর আইডি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভুয়া আইডি বন্ধ ও ভুয়া লাইক কমানোর উদ্যোগেরই অংশ এটি।
সংখ্যা নিয়েও হ-য-ব-র-ল
ফেসবুকের আসল ও ফেক আইডি বন্ধের পাশাপাশি ঢাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়েও তৈরি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। সমপ্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উই আর সোশ্যাল লিমিটেড ও কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হুটস্যুট ইন-করপোরেশন এক যৌথ প্রতিবেদনে শহরভিত্তিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যার বিচারে ঢাকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেসবুক ব্যবহারকারী শহর হিসেবে ঘোষণা করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরে এখন সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। তথ্য ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা ঢাকায় এত জনসংখ্যা আছে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে এই প্রতিষ্ঠান দুটোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকের মোট ব্যবহারকারী আর ঢাকার জনসংখ্যার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকায় এই তালিকার কোথাও একটা খটকা রয়েছে বলে তারা মনে করেন। কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বলেন, বিষয়টি এমন হতে পারে অনেকে আইডি খোলার সময় বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা এলাকার লোক ছাড়া অনেকে নিজের জেলাও ঠিকমতো দিতে পারে না, জেলা বা শহর হিসেবে ঢাকা উল্লেখ করে। এই হিসেবে ঢাকার নাম এসে থাকতে পারে। এদিকে জরিপের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমি মনে করি, যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা শতভাগ সত্য। অবশ্যই এর ভিত্তি রয়েছে। কারণ ফেসবুক থেকে ওই দুটি প্রতিষ্ঠান তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এখানে বলে রাখি, ওই তথ্য শুধু ঢাকার মধ্যে নয়, ঢাকার আশেপাশের এলাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্যও প্রতিবেদনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সর্বশেষ হিসাব মতে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। এর মধ্যে সারা দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *