আইপিএল খবর : তিনি ছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ‘ফিনিশার’। তিনি ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ক্যাপ্টেন কুল’।
দশম আইপিএলে আপাতত দু’টি তকমা নিয়েই আক্রান্ত দেখাচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। তা নিয়েই আজ, রবিবার রাত আটটার ম্যাচে তিনি মুখোমুখি হচ্ছেন এখনকার ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির। বেঙ্গালুরুতে ধোনি বনাম কোহালি এমনিতে খুবই আকর্ষণীয় দ্বৈরথ হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধোনি বনাম কোহালি নয়, কোহালি বনাম স্টিভ স্মিথ অনেক বেশি মারকাটারি দ্বৈরথ। বিশেষ করে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সদ্যসমাপ্ত সিরিজের তিক্ততার পর।
তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি অধিনায়কত্ব থেকে আগেই সরিয়ে দিয়েছিল বলে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হওয়ার সুযোগই নেই ধোনির সামনে। গুরুতর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ‘ফিনিশার’-এর যোগ্যতা নিয়েও। এখনও পর্যন্ত এই আইপিএলে চার ইনিংসে ধোনির সংগ্রহ মাত্র ৩৩ রান। সর্বোচ্চ ১২ অপরাজিত। স্কোরগুলি যথাক্রমে ১২ অপরাজিত, ৫, ১১, ৫। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি আদৌ ওয়ান ডে-র মতো ভয়ঙ্কর কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সফল প্রাক্তন অধিনায়ক।
কয়েকটি পরিসংখ্যান দেখে কিন্তু সত্যিই এ বার মনে হতে শুরু করেছে, সৌরভ খুব খারাপ প্রশ্ন তোলেননি। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে আগের সেই ফর্ম আর নেই ধোনির। যেমন ২০১৩-১৪ মরসুমে ধোনির টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গড় ছিল ৬০.৮। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৭.৫৭। এর পাশাপাশি, ২০১৫ থেকে ২০১৭, এই দু’বছরে ধোনির টি-টোয়েন্টি গড় অনেকে কম, ৩৮.৯। স্ট্রাইক রেটও পড়েছে— ১৩৭.৬২। ক্রিকেট ভক্তরাও এখন বলতে শুরু করে দিয়েছেন, তাঁর বায়োপিকের সেই সংলাপ ‘মাহি মার রহা হ্যায়’ এখন অতীত। এখন সেটা পাল্টে দিয়ে বলতে হবে ‘মাহি মার রহা থা’।
ব্যাটসম্যান ধোনির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ট্রাইক রোটেট করা, অর্থাৎ খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড চালু রাখা। সেটা তিনি করতেই পারছেন না আগের মতো। তাঁর ডট বল খেলার পার্সেন্টেজ অবিশ্বাস্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। একটি হিসেব পাওয়া গিয়েছে যে, শেষ ৩২টি ইনিংসে ধোনির ডট বল খেলার শতকরা হার ৫২ শতাংশ। সেটা দেখেই কারও কারও সন্দেহ জাগছে, সীমিত ওভারের ‘মিডাস’ তাঁর সোনার পরশ হারিয়ে ফেললেন কি না।
মাঠের মধ্যেকার এই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুণে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তাঁর খুব মধুর সম্পর্ক তৈরি না হওয়া। একে তো মালিক তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন অধিনায়কত্ব থেকে। তার ওপর সঞ্জীব গোয়েন্কার ভাই হর্ষ বিতর্কিত টুইট করে চলেছেন। দিন কয়েক আগেই তিনি লিখেছেন, ‘স্মিথ প্রমাণ করে দিচ্ছে, জঙ্গলের রাজা কে। ধোনিকে পুরোপুরি ঢেকে দিয়েছে। ধোনিকে সরিয়ে স্মিথকে ক্যাপ্টেন করাটা দারুণ সিদ্ধান্ত ছিল’।
এই টুইটের পরেই সাক্ষী ধোনি পাল্টা টুইট করেন। তাতে বিস্ময়কর হচ্ছে, চেন্নাই সুপার কিংগসের জার্সি গায়ে এবং হেলমেট পরে ছবি পোস্ট করেন সাক্ষী। সেখানে ‘কর্মা’র বাণী পোস্ট করে লেখেন, ‘যখন পাখি বেঁচে থাকে, সে পোকা খায়। কিন্তু সেই পাখি যখন মরে যায়, তাকে পোকারা খেতে আসে’। সাক্ষী ধোনির ছবি দেখে আরও বেশি করে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, ধোনি পরিবারের মনটা ইতিমধ্যেই পুণে থেকে উঠে গিয়েছে কি না। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সিএসকে আগামী বার ফিরে আসছে আইপিএলে। ধোনি ফের সেখানকার রাজা হতে চলেছেন। তার আগে বিরাটের আইপিএল হোমে নিজের সম্মান রক্ষার লড়াইয়ের ডাক আজ।