উপর মহলের চাপ সহ্য করতে রাজি না :মাশরাফি

Slider খেলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

 

 

images

 

 

 

 

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার সামনে খুব বেশি কথা বলেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’কে নিজের অবসর, সামনে ওয়ানডে নিয়ে পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বললেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়কের সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সামনের মাসগুলোতে আপনার বড় ভূমিকা থাকবে।
মাশরাফি: আমি ওয়ানডে ক্রিকেট উপভোগ করছি। আমার মনে হয়, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে আমাদের উন্নতি খুবই মন্থরগতিতে হচ্ছে। অথচ ওয়ানডেতে আমরা ১০ নম্বর থেকে ৭ নম্বরে উঠে গেছি (আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে)। আমরা ইতিমধ্যে অনেক বড় একটি ধাপ অতিক্রম করে ফেলেছি। দলের কিছু খেলোয়াড়ের দারুণ নৈপুণ্যের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আমি ওয়ানডে ক্রিকেট খুবই উপভোগ করছি। যতদিন পারি খেলে যেতে চাই। তবে এজন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা কঠিন। আমি চাই খেলা চালিয়ে যেতে। কিন্তু যদি খারাপ সময় আসে এবং আমার ওপর চাপ তৈরি হয়, তাহলে তো অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বলতে গেলে আপনার প্রথম স্পেলই বাংলাদেশ ম্যাচের ভাগ্য নিজেদের করে নেয়। শুরুতে এভাবে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার দক্ষতা কিভাবে অর্জন করেছেন?
মাশরাফি: এটা নির্ভর করে বোলারের আত্মবিশ্বাস এবং সামর্থ্যের ওপর। তামিম ইকবাল দ্রুত আউট হয়ে গেলে, রান করতে না পারলে অনেক সময় মানুষ তার সমালোচনা করে। কিন্তু বিষয় হলো, সে ওয়ানডেতে শুরুতে দুটি নতুন বলের মোকাবিলা করে। এই ক্ষমতা তার আছে বলেই খেলে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুতেই মোহাম্মদ শাহজাদ আমাকে ছক্কা মেরে দেয়। কিন্তু পরে কট বিহাইন্ড করে তাকে আমি আউট করি। এতে আমার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। ওই সময় আমি অনুভব করলাম, তাহলে আমিই সেরা।
প্রশ্ন: বর্তমান সময়ের প্রচলন হলো, একেবারে প্রথম ওভার এমনকি প্রথম বল থেকেই ওপেনাররা খুব আক্রমণাত্মক খেলেন। একজন বোলারের জন্য এমন পরিস্থিতিতে নিজের ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস ধরে রাখা কতটা কঠিন?
মাশরাফি: আমার আত্মবিশ্বাস এসেছে মূলত দীর্ঘ ক্যারিয়ার থেকে। যখন থেকে আমি খেলা শুরু করেছি তখন থেকেই। আমি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করি তখনকার তুলনায় বর্তমানে খুব বেশি ভয়ঙ্কর-বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান আছে বলে মনে হয় না। তখন প্রত্যেকটি দলে ছিল দারুণ দারুণ ওপেনার। ভারতের গৌতম গম্ভীর ও বীরেন্দর সেওয়াগ, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথিউ হেইডেন ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়সুরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার হার্সেল গিবস এবং গ্রায়েম স্মিথের মতো ওপেনাররা ছিল। তবে বর্তমানের ওপেনাররা টেকনিক্যালি খুব ভালো মানের নয়। এ কারণে আমার কাজটা সহজ হয়।
প্রশ্ন: আপনার বোলিংয়ে এমন কোনো পয়েন্ট আছে, যা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়?
মাশরাফি: উইকেট সবসময় আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে। তবে প্রথম আপনি কোথায় ফেলতে চেয়েছেন আর কোথায় সেটা পড়লো সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার ক্ষেত্রে, যদি প্রথম বলটা অফ স্ট্যাম্পের ওপর রাখতে পারি, ব্যাটসম্যান বাঁ-হাতি কিংবা ডান-হাতি যাই হোক, তাহলে আমি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। এখানে ব্যাটসম্যান বলটাকে ডিফেন্স করলো নাকি অন ড্রাইভ করলো সেটা কোনো ব্যাপার নয়। যদি এটাতে বাউন্ডারি হয়, তখন হয়তো খানিক্ষণের জন্য মন খারাপ হয়, তবে আত্মবিশ্বাস হারাই না।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কাকে বলবেন?
মাশরাফি: মেহেদী হাসান মিরাজ। সংক্ষিপ্ত ফরমেটের ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়েছে এ সফরে। তার সবেচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, একজন মানুষ হিসেবে তার ইতিবাচক মনোভাব। সত্যিই সে আমাকে খুব মুগ্ধ ও অবাক করেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে যখন আমি (২৬তম ওভারে) ব্যাট করতে নামি, তখন তাকে বললাম ৪১তম ওভার পর্যন্ত টিকে থাকতে। কারণ, আমরা খুব ভালো অবস্থানে ছিলাম না। আমরা বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়ে ফেলি। তখন এক ওভার মেডেন চলে যায়। তখন সে আমার কাছে এসে বলে, সে এভাবে খেলতে পারবে না। আমি বললাম- কেন? সে বললো, আমরা এই ম্যাচে হারবো। সেটা ২ কিংবা ১৫০ রানে হোক। ?সুতরাং আমাদের আরো ইতিবাচক খেলা উচিত। এটা হয়তো আমাদের সামনে জয়ের একটা সুযোগও তৈরি করে দিতে পারে। পরের ওভারে আমি দুটি বাউন্ডারি মারি। এরপর সে আমার কাছে এসে বললো- এটাই আমাদের খেলা। এভাবেই আমরা খেলবো। আমরা ওই ম্যাচটা হেরে যাই। কিন্তু তার ইতিবাচক অবস্থান আমার খুব ভালো লেগেছে। তার আত্মবিশ্বাস আমাকে মুগ্ধ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *