১১ বীর নারীকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

10917893_1586310234843177_2785436532876773338_n

‘পাক বাহিনী আমারে ধইরা নিয়া গেছে। আমার সামনে স্বামীরে মাইরা ফেলছে। আমারে অত্যাচার করছে। মানুষ আমারে ঘিন্না করে। মুক্তিযুদ্ধ কইরাও এই বয়সে মানুষের বাড়ি কাম করি। আমার দুঃখে গাছের পাতা কান্দে। কিন্তু আমি কোনো ভাতা, কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই না।’

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বীর নারী হিসেবে সম্মাননাপ্রাপ্ত জ্ঞানবালা বর্মণী। এ সময় তাঁর কান্নায় উপস্থিত অতিথি ও দর্শকদের মধ্যেও অনেককে চোখ মুছতে দেখা যায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি কমপ্লেক্সে ‘বীর নারী সম্মাননা-২০১৭ প্রদান ও তাঁদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জ্ঞানবালা বর্মণী এভাবেই আবেগতাড়িত হন। তৃতীয়বারের মতো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘৭১ ফাউন্ডেশন’।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অবদানের জন্য ১১ বীর নারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন বীরপ্রতীক তারামন বিবি, নোরা শরিফ (মরণোত্তর), আইভি রহমান (মরণোত্তর), নুরজাহান কাকন বিবি, জ্ঞানবালা বর্মণী, জিনাত সুলতানা আঁখি, শাহীন সামাদ, বুলবুল মহলানবীশ, সৈয়দা ওবায়দুন নাহার, যোগমায়া মালো ও সারাহ বানু শুচিকে। আইভি রহমানের পক্ষে সম্মাননা নেন তাঁর মেয়ে তানিয়া রহমান বখত।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীরা বক্তৃতায় বলেন, নানাভাবে তাঁরা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। কেউ সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। কেউ যুদ্ধাহতদের সেবা করেছেন। আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ নদী সাঁতরে পাকিস্তানি বাহিনীর খবর মুক্তিবাহিনীর শিবিরে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগের মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বা প্রাপ্য সম্মান। তাঁদের অনেকরই শেষ ইচ্ছা, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া।

কলকাতার গোবরা ক্যাম্পে অস্ত্র পরিচালনার ট্রেনিং নেন ডা. সারাহ বানু শুচি। তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী আমাদের বলেছিলেন, আমরা তোমাদের খাদ্য দেব। উত্তরে আমরা বলেছি, আমরা খাবার চাই না, অস্ত্র চাই।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে বলেন, অনেক নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন সহ্য করে নারীরা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। কেউ রাইফেল হাতে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। এ নারীরাই বাংলাদেশের গর্ব। আগামী প্রজন্মও তাঁদের নিয়ে গর্ব করবে।

জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা নারীদের স্বীকৃতির বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে ডা. খালেদ শওকত আলীর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শওকত আলী এবং ৭১ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জেবুন্নাহার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *