আঁটসাঁট জিনস না পরার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে নারীদের বেলায়। গবেষকেরা বলছেন, হাইহিল বা উঁচু জুতো, আঁটসাঁট জিনস ও ভারী ব্যাগ দেহের ক্ষতি করে।
গবেষকেদের মতে, আঁটসাঁট জিনস নিতম্ব ও হাঁটুর স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত করে, যার প্রভাব পুরো শরীরের ওপর পড়ে।
সম্প্রতি এ স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটিশ কায়রোপ্র্যাকটিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এখনকার ফ্যাশনসচেতন মানুষ স্বাস্থ্যের চেয়ে তাঁদের স্টাইলকে এগিয়ে রাখছেন।
যুক্তরাজ্যের ওই গবেষকেদের মতে, ৭৩ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে ব্যাকপেইন বা পিঠে ব্যথার জন্য তাঁদের ওয়ার্ডরোব দায়ী। সেখানে থাকা পোশাক পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা তৈরি করে বলে ২৮ শতাংশ নারীর মত। কিন্তু ৩৩ শতাংশ নারী এ বিষয় সম্পর্কে একেবারেই জানেন না।
এর মধ্যে ২০ শতাংশ নারী হাইহিল জুতা পরেন বলে তাঁরা পা ও পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। ১০ শতাংশ নারী ভারী গয়না পরেন, এতে গলার ওপর চাপ পড়ে।
গবেষকেরা বলছেন, আঁটসাঁট জিনস, একধারে ঝোলানো ভারী ব্যাগ, ফোলানো হুডযুক্ত কোট, হাইহিল ও ব্যাকলেস জুতা বেশি সমস্যা তৈরি করে।
বিসিএর গবেষক টিম হাচফুল বলেন, কিছু জনপ্রিয় পোশাকপরিচ্ছদ আছে, যা আড়ালেই শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ভারী হাতব্যাগ যেমন সমস্যার জন্য দায়ী, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আঁটসাঁট জিনসও সমস্যা তৈরি করতে পারে।
হাচফুল বলেন, ‘ভেবে আশ্চর্য লাগে, আমার কাছে আসা রোগীদের অনেকেই জানেন না তাঁদের পিঠে ব্যথা ও চালচলনে অসুবিধার জন্য পোশাকপরিচ্ছদ দায়ী হতে পারে। এমনকি অনেকেই জেনেশুনে ব্যথা সহ্য করে এ ধরনের পোশাক পরেন।
অবশ্য এর আগেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেটার বাল্টিমোর মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রচলিত পোশাকি ধারার সঙ্গে তাল মিলাতে এই জিনস পরা হলেও এসবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও রয়েছে যথেষ্ট। এ ধরনের জিনস মারাত্মক স্নায়বিক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
হালের এই পোশাক (জিনস) পরে আগে অনেকেই ‘মেরালজিয়া প্যারেসথেটিকা’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আঁটসাঁট কাপড় শরীরে অস্বস্তি তৈরি করে। এ ধরনের কাপড় শরীরকে অবশও করে দেয়। তা ছাড়া এ ধরনের পোশাক ঊরুতে ব্যথার অন্যতম কারণ।
২০০৩ সালে ‘কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল’ নামের একটি সাময়িকীতে আঁটসাঁট জিনসের কুফল সম্পর্কে লিখেছিলেন চিকিৎসক মালভিন্দার এস পারমার।
পারমার উল্লেখ করেন, সে সময়ে আঁটসাঁট জিনস পরার ফলে অস্বস্তিতে ভোগা অনেক নারী রোগী তাঁর কাছে এসেছিলেন। তাঁদের সবাই ছিলেন স্থূল প্রকৃতির। ঊরুতে অস্বস্তি ও জ্বালা অনুভব করছিলেন তাঁরা। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ঢিলেঢালা পোশাক পরার পর তাঁদের অনেকেই পরবর্তী ছয় সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, আঁটসাঁট প্যান্ট এর আগেও আলোচনায় এসেছে। এ ধরনের পোশাক ছেলেদের শুক্রাণু হ্রাস করতে পারে। চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকা এসব পোশাক ক্ষতও তৈরি করতে পারে। তাই চিকিৎসকেরা এ ধরনের পোশাক পরতে মানা করেছেন।
তথ্যসূত্র: পিটিআই, জিনিউজ।