বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। আর ২০১৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৭১ বছর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুমৃত্যু হ্রাস এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের দেরিতে মৃত্যু গড় আয়ু বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘স্বাধীনতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে, অর্থাৎ ২০০ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়েনি। সেটা স্বাধীনতার পর বেড়েছে। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা ও সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালের এক অনবদ্য স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে।
বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর। আর বর্তমানে ৭১ বছর। গত ৪৫ বছরে গড় আয়ু বেড়েছে ১২ বছর। ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একটি দেশ ছিল। তখন পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) অংশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৩ বছর। বর্তমানে পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ৬৬ বছর। ৪৫ বছরে পাকিস্তানের গড় আয়ু বেড়েছে ১৩ বছর।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি মালদ্বীপের। ১৯৭১ সালে দেশটির গড় আয়ু ছিল ৪৪ বছর। এখন ৭৬ বছর। অর্থাৎ ৪৫ বছরে দেশটির গড় আয়ু বেড়েছে ৩২ বছর। একই সময়ে ভুটানেরও গড় আয়ু বেড়েছে ৩২ বছর। এ দুটি দেশেই গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে গড় আয়ু বৃদ্ধি সবচেয়ে কম হয়েছে শ্রীলঙ্কার। ৪৫ বছরে ১০ বছর। ১৯৭১ সালে দেশটির গড় আয়ু ছিল এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৬৪ বছর। বর্তমানে ৭৪ বছর, সার্ক অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
শিল্পোন্নত ৩৫টি দেশের গড় আয়ু বৃদ্ধি নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট। তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যাশিত গড় আয়ুর হিসাবটি দরকার হয় স্বাস্থ্য, সামাজিক সেবা ও পেনশন বা অবসরকালীন ভাতার পরিকল্পনা তৈরির জন্য। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন নীতি গড় আয়ু বৃদ্ধির সহায়ক। যেসব দেশ শিক্ষা-কাজ-অবসর পরিকল্পনা পুনর্গঠন করেছে এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, সেই দেশগুলোর গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। প্রবন্ধকারদের হিসাব অনুযায়ী ২০৩৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের গড় আয়ু হবে ৯০ বছর।
ল্যানসেট-এ বা হয়েছে, স্বাস্থ্যের উন্নতিতে উপার্জন ও শিক্ষা-এই দুটি সামাজিক নির্ধারকের (সোশ্যাল ডিটারমিনেন্টস) বড় ভূমিকা আছে। এগুলো পুষ্টি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যঝুঁকিকে প্রভাবিত করে।
গড় বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশুমৃত্যু আগের চেয়ে কমেছে, যা সরাসরি গড় আয়ু বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, অপুষ্টি হ্রাস ও সচেতনতা বৃদ্ধি সমাজে প্রতিরোধমূলক পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকারের উদ্যোগ ও সামাজিক সচেতনতার কারণে পোলিও নির্মূল সম্ভব হয়েছে; পাশাপাশি কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া বা কলেরার প্রকোপ কমে যাওয়ায় মৃত্যু হার কমেছে।