ভাষার বিকৃতি বড্ড পীড়া দেয় জব্বার পুত্র বাদলকে

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

54469_f3

 

 

 

 

 

 

 

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বাদল। ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের একমাত্র পুত্র। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন জব্বার। সে সময় বাদলের বয়স ছিল মাত্র একবছর তিন মাস। আজ তার বয়স ৬৬ বছর পেরিয়েছে। এখনো তার কাছে বাবা মানে বাংলা ভাষা। বাবা মানে ২১শে ফেব্রুয়ারি। বাদল বলেন, ছোট বেলায় দাদীর কাছে বাবার গল্প শুনেছি। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর পাঠ্যবইয়ে বাবার নাম পড়েছি। তখন বাবার বীরত্বের কথা পাঠ্যবইয়ে পড়ে গর্বে বুক ভরে উঠতো। ভাষা শহীদ জব্বারের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। সেখানেই বেড়ে ওঠা বাদলের। দাদীর কাছে শুনেছেন বাবা ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। বাদল জানান, বাবার কথা কিছুই মনে নেই। এমনকি বাবার কবর দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক বছর। এইচএসসি পাস করে ঢাকায় প্রথম আসেন বাদল। তখন আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবর খুঁজে বের করেন। বাদল বলেন,  ছোট বেলায় আর্থিক কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছিল শহীদ জব্বারের পরিবারকে। এরপর সামরিক শাসন জারি হলে জব্বারের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশ স্বাধীনের পর  সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন বাদল। ১৯৭৩ সালে ভাষা শহীদ জব্বারের পরিবারের নামে সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন বঙ্গবন্ধু। তেজকুনীপাড়ায় ১৬৫/এ/১ নম্বরের সেই বাড়িতে টিনের ঘরে স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন নুরুল ইসলাম বাদল। বাড়ির গেইটের উপরে লেখা ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের বাড়ি।  যেই ভাষার জন্য তার বাবা প্রাণ দিয়ে গেছেন সেই ভাষার বিকৃতি বড় কষ্ট দেয় বাদলকে। ইংরেজি ঢংয়ে বাংলা ভাষার প্রচলন ভাষা শহীদদের অপমানের শামিল বলে মনে করেন বাদল। বলেন- পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে  এমন নজির নেই। এই গৌরব শুধু আমাদের রয়েছে। তাই ভাষার বিকৃতি রোধ করে প্রকৃত বাংলা ভাষার চর্চা সবখানে চালু করতে হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সবই একই সুতোয় গাঁথা। এই দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন হানাহানি বন্ধ হবে না। এ দেশে  ভাষা শহীদ পরিবারগুলোর কিছুই চাওয়ার নেই। আমরা শুধু আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু চাই। কিছুটা আক্ষেপের সুরে বাদল বলেন এই যে একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে বাংলা একাডেমি বইমেলাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু ভাষা শহীদদের পরিবার হিসেবে আমরা কোথাও কোনো আমন্ত্রণ পাই না। এমন কি ভাষা শহীদের ভাতা পেতেও আমাদের বেগ পেতে হয়। ভাষা শহীদ জব্বারের নাতি মোহাম্মদ ফাইজুল ইসলাম তেজগাঁও কলেজে ডিগ্রি কোর্সে পড়েন।  ফাইজুল বলেন, আমার দাদা ভাষা শহীদ এটা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। দাদার মতো করেই আমি এ দেশকে ভালোবাসতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *