বিশ্বব্যাংক নিয়ে মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্য অশনিসংকেত: বিএনপি

Slider রাজনীতি

5299586b351a4-rizvi

ঢাকা; বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রী ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ নেতাদের বক্তব্য বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অশনিসংকেত। এটা দেশের জন্য শুভ নয়, অশুভ লক্ষণ। এতে দেশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

আজ শুক্রবার সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিশ্বব্যাংক সর্বনিম্ন¤সুদে অর্থাৎ (শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ) সুদে ঋণ দেয়। অন্য কোনো জায়গা থেকে ঋণ নিতে হয় ৩ শতাংশ সুদ বা তারও ঊর্ধ্বে। সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের কথায় মনে হয়, তাঁরা যেন হঠাৎ করে দুধ দিয়ে গোসল করে নতুন গ্রহ থেকে আবির্ভূত হয়েছেন। এই মন্ত্রী ও নেতারা সারা দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন। এমন কোনো খাত নেই—যেখানে দুর্নীতি নেই। লুট করে দেশের সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে। শেয়ার মার্কেটের লাখো কোটি টাকা লোপাট করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে তাঁরা এখন সুইস ব্যাংক ভরে ফেলেছেন, কানাডায় বেগমগঞ্জ তৈরি করা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় সুরম্য ভিলা বানানো হয়েছে। তাঁরাই এখন নিজেদের সাফসুতরো হিসেবে জাহির করে তারস্বরে চিৎকার শুরু করেছেন।

বিএনপির এই নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পদ্মা সেতুর ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলায় কানাডীয় আদালতের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের লাফালাফি ও দাম্ভিকতায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এতে চলমান অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে সংকট হতে পারে। বাংলাদেশে এখনো বিশ্বব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি খাতে তাদের বড় বড় প্রকল্প রয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থায়নে শতাধিক প্রকল্প চলমান। বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে বড় দাতা সংস্থা। কিন্তু কানাডীয় আদালতে রায়ের পর সরকারের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করায় সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ সরকারের নির্দেশেই এনবিআর ও দুদক বাংলাদেশের অফিসে কাজ করা বিশ্বব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখে তাঁদের দুর্নীতির তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে এনবিআর বিশ্বব্যাংকের ১৬টি গাড়ি তলব করেছে। এত কিছুর পরও বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, খালেদা জিয়ার জন্য সংবিধান ও নির্বাচন বসে থাকবে না। ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলতে চাই—তাহলে কি শুধুমাত্র শেখ হাসিনার জন্যই ভোট-নির্বাচন বসে থাকবে? তাঁর মুখ চেয়েই নির্বাচন হবে কি হবে না, সেটি নির্ধারিত হবে? বিএনপি প্রত্যয়দৃপ্ত কণ্ঠে বলতে চায়, এই দল এবং দলের চেয়ারপারসন যিনি বারবার অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে অর্গলমুক্ত করেছেন তাঁকে ও তাঁর দলকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ধরনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে সুখের ইন্ধন দিতে পারেন, কিন্তু জনগণের মধ্যে তা বড় ধরনের আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। তাঁর বক্তব্যে যে ষড়যন্ত্র ও অশুভ পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে তা কারও হৃদয়ঙ্গম করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন করার যেকোনো অপচেষ্টা এ দেশের জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দেবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। সরকারের অশুভ কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আর সম্ভব হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *