বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ নেই

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

53592_f2

 

ঢাকা; পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘ষড়যন্ত্র’ করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)’ আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ নেই। আবার এটাও সত্য, বিশ্বব্যাংক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে,  যারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা বিশ্বব্যাংকের  বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন কি-না, সে বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী জানান, বিশ্বব্যাংকের তিনজন প্রতিনিধির সঙ্গে তখন দুদকের বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে তিনিও  উপস্থিত ছিলেন। তখন বিশ্বব্যাংকের লোক দিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার কথা বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমি তখন বলেছিলাম বাংলাদেশ স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। সেখানে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা আমাদের স্বাধীনতা কারও হাতে তুলে দিতে পারি না। আইনমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের একজন প্রতিনিধি বলেছিলেন, তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল  হোসেনকে আসামি করতে হবে। এমনকি এজাহারে তার নাম দিয়ে তাকে রিমান্ডে নিলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো জানান, বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিনিধির একজন ছিলেন ওকাম্পো, যার নামে পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং মামলাও করা হয়। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ষড়যন্ত্রের অংশ- এমন  উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এটি ছিল ষড়যন্ত্রের একটি বাঁধ। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র সেটারই একটি ধারাবাহিকতা। তিনি অভিযোগ করেন, প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি ড. ইউনূস পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। তবে, এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না, সেটি বলতে পারছি না। আইনমন্ত্রী বলেন, অপরাধের মধ্যে যদি না পড়ে তাহলে কাউকে আইনের আওতায় আনা উচিত হবে কি-না, যেহেতু সামাজিক আইন, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম এসব তো আছে। আর আপনারাই (সাংবাদিক) বিচার করতে পারেন। যদি এটি আইনের আওতায় নাও আসে আপনারা কি আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে সেই বিচার করতে পারবেন না? পদ্মা সেতু নিয়ে কানাডার আদালতে দেয়া সাক্ষীদের বক্তব্যসহ সকল দলিল দুদককে প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, এগুলো প্রকাশ করা উচিত। যেহেতু তারা স্বাধীন তাই তারা এই দলিল প্রকাশ করুক।
প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইন নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি সংশোধন হলে প্রবাসীদের কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সংবিধান নাগরিকের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নাগরিকত্ব আইন কারও কোনো উত্তরাধিকার বন্ধ করবে না। এই অধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বার বার সময় দেয়ার পরও অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির বিধিমালা সংক্রান্ত গেজেট এখনো প্রকাশ করা হয়নি-এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, এই গেজেটের কিছু অনুচ্ছেদ ছিল যা সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যে কারণে প্রেসিডেন্ট এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। তবে, আগে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা সারানো হয়েছে। অচিরেই তা প্রকাশ করা হবে। সারা দেশের আদালতগুলোতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাজট নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিরসন ও সাক্ষী হাজিরের জন্য অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও), চিকিৎসক ও সাক্ষীদের ফোন নম্বর রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এলআরএফ’র সভাপতি আশুতোষ সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *