কোনদিকে যাবে নুরুল হুদা কমিশনের পথ?

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

52647_f1
ঢাকা; নানান কিসিমের নির্বাচন কমিশন দেখেছে বাংলাদেশের ইতিহাস। কেউ প্রশংসিত হয়েছেন। কারো কপালে জুটেছে কলঙ্ক। কেউ বিদায় নিয়েছেন চাপে। কেউবা পূরণ করেছেন মেয়াদ। নির্বাচন কমিশনে এখন পালাবদলের সময়। মেয়াদ শেষে বিদায় নিচ্ছেন কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের কমিশন। ইতিহাসে এরই মধ্যে নিজের স্থান নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলছে নুরুল হুদা কমিশন। সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
সোমবার রাতের শুরুতে সচিবালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে নয়া নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে তথ্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সেখানে তিনি এটা জানান যে, সার্চ কমিটিতে দেয়া বিএনপির তালিকায় মাহবুব তালুকদার এবং আওয়ামী লীগের তালিকায় কবিতা খানমের নাম ছিল। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এবং অন্য দুই কমিশনারের নাম কাদের তালিকায় ছিল এ ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য জানাননি। স্বচ্ছতার স্বার্থেই জাতিকে এ তথ্য জানানো প্রয়োজন। অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সার্চ কমিটিকে দেয়া তরিকত ফেডারেশনের প্রস্তাবে সিইসি হিসেবে নুরুল হুদা এবং কমিশনার হিসেবে সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, সাবেক সচিব আলী কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জিনাতের নাম ছিল। যাদের মধ্যে ৩ জনকে নতুন ইসিতে নিয়োগ দিয়েছেন  প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে, ন্যাপও সিইসি হিসেবে নুরুল হুদার নাম প্রস্তাব করে।’
আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে এসেছে নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন। হয়েছেও তাই। বিএনপি দৃশ্যত হতাশ ও ক্ষুব্ধ। যদিও দলটির তালিকা থেকে একজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন।
নবগঠিত হুদা কমিশনের সামনে নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে উত্তরার বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা জানিয়েছেন, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এখনই তিনি প্রস্তুত নন। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার পক্ষে নিজের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করেছেন তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও একইমত ব্যক্ত করেছেন। তবে অন্তত একজন কমিশনারের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে, কোনো দল নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন কমিশনের তেমন কিছু করার নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে অনেক। তবে সে অর্থে কমিশনের ভূমিকা কখনো বড় হয়ে ওঠেনি। বরং নির্বাচনের সময় ক্ষমতায় কারা থাকেন সে বিষয়টিই বারবার বড় করে দেখা হয়েছে। এবং অতীতে এটাও দেখা গেছে, বেশির ভাগ সময় নির্বাচনকালীন সরকারই প্রধান খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করেছে। রেফারির ভূমিকায় থাকা নির্বাচন কমিশনের এসব ক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করারও ছিল না। দৃশ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ার পরই নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় চাওয়ার এক ধরনের দাবি উঠে। কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির ফর্মুলাও আসে। যদিও সংবিধান বা আইনে এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলা নেই। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান প্রথম সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। ওই কমিটি কাজী রকিব উদ্দীন কমিশনকে খুঁজে বের করেছিল। আগেই বলেছি, এই কমিশন ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।

নানা রকম কথা বলা হবে। চলবে বাতকিবাত। টেকনিক্যাল শব্দের সমাহারও থাকবে। কিন্তু এটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট যে, নুরুল হুদা কমিশনের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনেও যদি বিএনপি জোট অংশ না নেয় সেক্ষেত্রে অবশ্য চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। কিন্তু নির্বাচনে যদি বিরোধী জোট অংশ নেয় সেক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে কমিশনকে। শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ বজায় রাখা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন কি-না সেটাই হবে দেখার সবচেয়ে বড় বিষয়। কেএম নুরুল হুদা কমিশন নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে একধরনের সতর্ক আশাবাদই উচ্চারিত হচ্ছে। পুরনো জুতাতেই পা ঢুকাবে এই কমিশন। নাকি নিজেদের জন্য তৈরি করবে নতুন জুতো। দেখার জন্য অবশ্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।

চাপের কাছে নতি স্বীকার করবো না -সিইসি

কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, কোনো দলের কাছে, ব্যক্তির কাছে নির্বাচন কমিশন নত হবে না। সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক নির্বাচনের জন্য নতুন কমিশন আপ্রাণ চেষ্টা করবে জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো  যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহী হয়, এই কাজগুলো করবো। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় সাংবাদিকদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমার কাছে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব নেই। বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর গুরুত্ব নেই। আমরা আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করবো। তিনি বলেন, আমার কাছে সব দল সমান। কোনো দলের প্রতি রাগ বা ক্ষোভ নেই।

রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো বটেই। কিন্তু নির্বাচিত সরকারের অধীনেই তো নির্বাচন হতে হবে। সব দেশে তা-ই হয়, এই দেশে তা-ই হবে। দু-একটা টার্মে ডিস্টার্ব হবে। এরপরে আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। নিজেদের কর্ম পরিকল্পনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রথমে আমাদের কাজের একটা ছক তৈরি করতে হবে, কখন কোনটি করবো। কারণ কী অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আছে, সেটা তো জানি না। তবে আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন অনেক সমৃদ্ধ। এত বছরে তারা একটা শক্ত কাঠামো তৈরি করেছে। সেটাকে ব্যবহার করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশনারের অধীনে তো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতে হবে না কেন? নির্বাচন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছি। এটা আমার জন্য অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। বর্তমান কমিশনের ধারায় আপনি কাজ করবেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, ‘ধারা কখনো এক থাকে না। ধারা পরিবর্তন হয় পরিস্থিতির ওপর। আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনায় কৌশল ঠিক করবো। একই ধারা সব সময় থাকে না। তাদের চেয়ে আমাদের অবস্থান ভিন্নতর হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *