নিজের লাগানো চন্দনগাছের কাঠে দাহ সুরঞ্জিতের

Slider সারাদেশ

83ab6f1bd1aa1706de6b7a1389fa8277-27

 

 

 

 

 

সিলেট; নিজ বাড়ির উঠোনে বেশ কয়েক বছর আগে, একটি চন্দনগাছের চারা লাগিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত রাজনীতিক সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। মনে মনে তিনি কি চেয়েছিলেন, এ গাছের কাঠেই তাঁর অন্তিমশয্যা জ্বলুক? কেউ জানে না, কী ইচ্ছে ছিল তাঁর মনে। তবে সেই গাছটি কেটে ফেলা হলো। প্রয়াত এই রাজনীতিকের দাহ হলো সেই চন্দনগাছের কাঠ দিয়ে। 

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রণবীর রায় বললেন, এই গাছের কাঠ ছাড়াও ঢাকা ও সিলেট থেকে আরও কিছু চন্দনকাঠ সংগ্রহ করা হয়। সেই চন্দনকাঠের জ্বালানি দিয়েই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শেষকৃত্য হচ্ছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরু হয়েছে। এর আগে সুরঞ্জিতের নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লার হাজারো মানুষ অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানান প্রিয় নেতা ‘সেনবাবুকে’।

হাওর–অধ্যুষিত দিরাই উপজেলার শহর দিরাইয়ে সকাল থেকেই শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। শুধু দিরাই-শাল্লা নয়, বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসে মানুষ। দুপুর ১২টার মধ্যে শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মানুষের এই স্রোত শহরের থানা রোডের সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাড়ির দিকে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এই বাড়িতে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের ধনঞ্জয় দাস (৭২)। হাজারো মানুষের ভিড়ে বারান্দার এক কোণে চেয়ারে চুপচাপ বসে আছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক। হাতে লাঠি, শরীর কাঁপছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছেন এদিক-ওদিক। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম বলতেই চোখের পানি ছেড়ে দেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, ‘একসঙ্গে স্কুলে পড়েছি, রাজনীতি করেছি। বাড়িতে এলেই আসার ডাক পড়ত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ হতো। আর তো মানুষটার সঙ্গে কোনো দিন দেখা হবে না।’
প্রিয় নেতাকে শেষ দেখা ও শেষ বিদায় জানাতে এমন হাজারো মানুষ অশ্রুসিক্ত নয়নে ভিড় করেছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাড়িতে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার সিলেট, সুনামগঞ্জ ও শাল্লা উপজেলা হয়ে বিকেল চারটায় এসে পৌঁছায় দিরাই শহরের হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে মরদেহ প্রথমে নেওয়া হয় শহরের জগন্নাথ মন্দিরে। এরপর তাঁর বাড়িতে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের পর মরদেহ নেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী বালুর মাঠে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শেষ বিদায় জানাতে এবং এক নজর দেখতে মাঠে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিত খায় পুলিশ। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সাংসদ মহিবুর রহমান মানিক ও আবদুল মজিদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ প্রমুখ।
সৌমেন সেনগুপ্ত উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসার সময় আমাকে বলা হয়েছিল, আমার সঙ্গে আর কোনো আত্মীয়স্বজন এখানে আসবেন কি না। আমি বলেছিলাম, আমি যেখানে যাচ্ছি, সেই দিরাই-শাল্লার সব মানুষ আমার বাবার আত্মীয়, সেই সূত্রে আমারও। আপনারা বাবার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করবেন। বাবা যেভাবে জীবনভর মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করেছেন, আমি যেন সেভাবে থাকতে পারি, মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।’

মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ আবার আনা হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাড়িতে। দিনের আলো নিভে যাওয়ার পর জন্মভিটায় তৈরি করা চিতায় তোলায় হয় তাঁর মরদেহ। পরে সৌমেন সেনগুপ্ত তাঁর বাবার মরদেহে মুখাগ্নি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *