চ্যালেঞ্জ করে ফল পরিবর্তন ৪২০০ শিক্ষার্থীর

Slider শিক্ষা

51344_b66

 

ঢাকা; প্রাথমিক সমাপনীতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া আইরিন আক্তার সানজিদার প্রত্যাশা ছিল জেএসসিতেও একই ফল আসবে। কিন্তু গত ২৯শে ডিসেম্বর ফল প্রকাশ হওয়ার পর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ রাইফেলস স্কুলে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীর মাথায়
আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ফেল এমন খবরে সে সংক্ষুব্ধ হয় এবং ওই বিষয়ের খাতা চ্যালেঞ্জ করে। তার আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটলো পুনঃনিরীক্ষণের প্রকাশিত ফলে। অর্থাৎ সব বিষয়ের মতো ফেল করা আইসিটিতে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। শুধু আইরিন নয়, তার মতো প্রায় ৪ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করে তাদের প্রত্যাশিত ফলের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এর জন্য পরীক্ষকদের গাফিলতিকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। ভবিষ্যতে খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও বোর্ড কর্তাব্যক্তিরা। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সাধারণ ৮টি ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে খাতা চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীদের ফল দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে ৪ হাজার ২৫২ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭৩১ জন এবং নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪৭৭ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে। এই বোর্ডে ২৬ হাজার ৮৮৫ জন পরীক্ষার্থী ফল পুুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে এর মধ্যে ফল পরিবর্তন হয়েছে ১ হাজার ৫৭৮ জনের; ফেল থেকে পাস করেছে ২৩৮ জন আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০৬ জন। এরপর দিনাজপুর বোর্ডে দ্বিতীয় অবস্থানে। এই বোডে ৮৭৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫৭ জন, ফেল থেকে ৫৩ জন পাস করেছে। এরপর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। এই বোর্ডে ৩৫৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে পাস করেছে ৭৬ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭১ জন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ২৭৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬ জন; ফেল থেকে পাস করেছে ৫৪ জন। যশোর শিক্ষাবোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ২০৫ জনের; ফেল থেকে পাস করেছে ৪৫ জন; নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২২ জন। বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৯২ জনের; নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ জন; ফেল থেকে পাস করেছে ১২ জন। সিলেট বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ১৪৬ জনের; ফেল থেকে পাস করেছে ৪২ জন; নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ জন। এভাবে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ৪৫৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে ৫৮ জন ফেল থেকে পাস করেছে এবং নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৮ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ফল নিয়ে আপত্তি তুলেছিল ৪ হাজার ৬৪৬ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ফল পরিবর্তন হয়েছে ২৬৯ জনের। আগে ফেল করলেও এখন পাস করেছে ১৫৩ জন। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৫ জন।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভুল পাওয়া গেছে বৃত্ত ভরাটে। অর্থাৎ পরীক্ষকরা যখন শিক্ষার্থীর নম্বরপত্রের বৃত্ত বরাট করেন তখন এই ভুল হয়। যেমন একজন শিক্ষার্থী ৮২ পাওয়ার পর তার মোট নম্বরপত্রের বৃত্ত ভরাট করতে গেয়ে পরীক্ষক ভরাট করেছেন উল্টো, অর্থাৎ ২৮। মানে জিপিএ-৫ পাওয়া একজন শিক্ষার্থীকে ফেল করে দেয়া হয়েছে। একজন পরীক্ষক এক মাসের মধ্যে দেড় হাজার খাতা মূল্যায়ন করতে হয়। তাড়াহুড়া করে ফল প্রকাশের কারণেই খাতায় ব্যাপক ভুল হচ্ছে। যার মূল্য দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। কিছু খাতায় নম্বরের যোগ ফল ঠিক ছিল না। কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও ভুল।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার বলেন, এটা পরীক্ষকদের গাফিলতির কারণে হয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে ব্যাপারে কোর্ট এটা নির্দেশনা দিয়েছে। নতুন এই পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু হলে ভুলের পরিমাণ আরো কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২৮ হাজার ৭৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত ২৯শে ডিসেম্বরের প্রকাশিত ফলে এর মধ্যে পাস করেছিল ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন। জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯ জন। আর জেডিসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১২ হাজার ৫২৯ জন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ভুল কমানোর জন্য একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে ভুলের পরিমাণ কমে আসবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *