ভালো নেই তাঁরা, আগের কাজেও ফেরেননি

Slider বাংলার মুখোমুখি

343ae4d1e1c4640072e508868d0c8a12-Untitled-21

ঢাকা; কারাগার থেকে ফিরে ভালো নেই সাংবাদিক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কারাভোগের পর শারীরিক অসুস্থতা বেড়েছে। আদালতে পাসপোর্ট জমা থাকায় উন্নত চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরেও যেতে পারছেন না। এ কারণে কারামুক্তির পর থেকে তাঁরা বাসাতেই সময় কাটাচ্ছেন। নিজ নিজ কাজেও পুরোপুরি ফেরেননি।

কারাগারে যাওয়ার আগে পত্রিকায় লেখালেখি, টেলিভিশনের টক শোতে অংশগ্রহণ, আর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতেন তাঁরা। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থায় তাঁদের দেখা যায় না। পরিচিতজনদের মধ্যে ছাড়া অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকছেন। তাঁদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না কেবল একদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে জাতীয় প্রেসক্লাবে মতবিনিময় করেন।

সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এই তিনজনের ঘনিষ্ঠরাই বলছেন, কারাগারে যাওয়ার আগে তাঁরা যে ধরনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, এখন আর তা করছেন না। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অনেকটাই এড়িয়ে চলছেন। তবে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এলে নিজ নিজ কাজে আগের মতোই যোগ দেবেন তাঁরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গত বছরের ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি জামিনে মুক্তি পান একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর। মুক্তির পর তাঁর সময় কাটছে ইস্কাটনের নিজ বাসায়। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী তালেয়া রেহমান। একান্ত ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে দেখা করছেন। একমাত্র ছেলে লন্ডনে থাকেন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক বাসার বাইরে যান না। ৮২ বছর বয়সী শফিক রেহমানের শারীরিক নানা অসুস্থতাও রয়েছে।

রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রুপ নাইনের (জি-৯) উপদেষ্টা ছিলেন শফিক রেহমান। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সায়ন্থ সাখাওয়াত বলেন, শফিক রেহমান অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসা সব সময় লন্ডনে হয়েছে। পাসপোর্ট ফেরত পেলেই তিনি লন্ডনে যাবেন। তিনি বলেন, শফিক রেহমান শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে মোটেও ভেঙে পড়েননি। মামলা লড়ছেন। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শফিক রেহমান তেমন কোথাও যান না। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন না। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও যান না। তাঁর সময় কাটে বই পড়ে আর লেখা সংগ্রহ করে। সায়ন্থ বলেন, ‘কারাগার থেকে বের হওয়ার পর শফিক ভাই বিভিন্ন দেশের কারাগারের পরিবেশ, তার সংস্কার ভাবনা নিয়ে একটি বই লেখার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। সময় সুযোগ পেলে তিনি সেটা লিখবেন।’

আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক বিচারকের স্কাইপ কথোপকথন ফাঁস ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া-সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
টানা প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগের পর গত বছরের ২৩ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তাঁর পাসপোর্টও আদালতের কাছে জমা ছিল। সম্প্রতি আপিল বিভাগ তাঁর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছেন।

মাহমুদুর রহমানের ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে মাহমুদুর রহমান গুলশানে নিজ বাসায় বেশি সময় থাকছেন। সেখানে মা ও স্ত্রী আছেন। মূলত বই পড়েই সময় কাটে মাহমুদুরের। রাজনৈতিক বা গণমাধ্যমের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখছেন না। কারাগার থেকে মুক্তির পর কোনো লেখালেখিও করেননি।

মাহমুদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ  বলেন, মাহমুদুর রহমানের শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাঁর মেরুদণ্ড, চোয়াল ও ঘাড়ে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু আদালতে এত দিন পাসপোর্ট আটকে থাকার কারণে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারেননি। এখন আদালত থেকে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশের বাইরে লন্ডনে চিকিৎসা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বিশেষ করে মেরুদণ্ড ও চোয়ালে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। আবদাল আহমদ বলেন, এই মুহূর্তে পত্রিকা করার কথা ভাবছেন না মাহমুদুর। শরীর ঠিক রাখা নিয়েই যত চিন্তা। কেননা, কারাগারে থাকার সময় ভালো চিকিৎসা হয়নি। তা ছাড়া তাঁর কিছু চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতেই হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর ২০১৫ সালের ৫ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি জামিনে মুক্তি পান গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। প্রায় ২২ মাস কারাভোগের পর কারাগার থেকে বের হন মান্না।

ছাড়া পাওয়ার পর অবশ্য এখনো পুরোদমে রাজনীতিতে সক্রিয় হননি মান্না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানুষের মৌলিক অধিকারের আন্দোলনে তিনি সব সময় ছিলেন, এখনো আছেন এবং থাকবেন। তিনি বলেন, ‘ছাড়া পাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ ছিল। কেননা, কারাগারে সেভাবে চিকিৎসা হয়নি। কিন্তু এখন শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো। নিজেকে ফিট মনে করছি। শিগগিরই আবার পুরোপুরি রাজনীতির মাঠে নামব।’ তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দেখছি, সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। আমিও তো সেটাই বলছি। এখন এগুলো নিয়ে বলব।’

মান্নার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বলেন, ‘মান্না ভাইয়ের জামিন শর্তহীন। তবে তাঁর পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হয়েছিল। এখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হলে পাসপোর্ট লাগবে। সে জন্য আইনজীবীরা আবেদন করবেন কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। অবশ্য চিকিৎসকেরা তাঁকে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শও দিয়েছেন।’ তাঁরা বলেন, ‘আইনজীবীরা বলছেন, যে অভিযোগে মান্না ভাইকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে তা একেবারেই ভিত্তিহীন। এ কারণে মামলা বাতিল (কোয়াশ) চাওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *