স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
গাজীপুর অফিস: আন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে লাশ নিয়ে পালানোর সময় আটক স্বামীর অভিযোগ স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের। তবে তথ্য প্রমানে গড়মিল পাওয়া গেছে স্বামীর নাম। পরকীয়া প্রেমিকটি কে তা নিয়েও নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর শহরের দক্ষিন ছায়াবীথী এলাকায় ই-১০৭/২ নম্বর বাসার ৫তলায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম নাজমুন্নাহার(২২)। স্বামীর নাম রফিকুল ইসলাম(৩০)। তিনি একটি প্রাইভেট ফার্মের কর্মকর্তা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) আরশাদ মিয়া আসামী রফিকুল ইসলামের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে জানান, ফেইসবুকের মাধ্যমে এদের বিয়ে হয়। ৬ মাস পূর্বে ওই বাসা ভাড়া নেয়। স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের জের ধরে ২৬ অক্টোবর সকালে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর জবাই করেছেন স্বামী রফিকুল ইসলাম। এই অবস্থায় পরকীয় প্রেমিক কে! তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৫তলা ভবনের মালিক এ্যাডভোকেট মোঃ শামীম ভূইয়া। ৫তলা বাসার দোতলায় থাকেন তিনি। ৫তলায় তিনটি ইউনিট। পূর্ব পাশের ইউনিটে থাকতেন রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী।পশ্চিম পাশের ইউনিটে জনৈক আব্দুস সাত্তার নমে এক লোক যৌথ পরিবার নিয়ে থাকেন। মাঝের ছোট একটি ইউনিটে থাকেন তিনজন মেয়ে। কোন পুরুষ মানুষ থাকেন না। এর মধ্যে সাবিকুন্নাহার সোহাগী(২৫) গাজীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টারর্নী করছেন। স্বামী বিদেশে থাকেন। অপর দুই মেয়ে আফরোজা আক্তার(১৮) ও রিপা আক্তার(১৭) গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত বলে জানান। তিন মেয়েই বলেছেন, নাজমুন্নাহার খুব ভাল ছিলো। তবে খুনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। কোন চিৎকার বা চেচামেচিও শুনেননি তারা।
ঘটনার পর স্বামী পালানোর সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসার মালিক গতরাতে গেটে নতুন তালা লাগিয়েছিলেন। ফলে মালিক ছাড়া আর কেউ গেট খোলতে পারেননি। সকালে মালিক গেট খোলে দিলে রফিকুল ইসলাম ঘরের আসবাবপত্র নামিয়ে নীচে পিকআপে তোলেন। তোষকে পেছানো স্ত্রীর মৃতদেহ পিকআপে উঠার পর পঁচা গন্ধ বের হয়। এরপর রফিকুল ইসলাম দৌঁড়ে পালাবার চেষ্টা করলে জনতার হাতে আটক হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ৩সেপ্টেম্বর নাজমুন্নাহার গাজীপুর শহরের গ্রীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ভর্তির রেজিস্টার(২৩৫৮)।
হাসপাতালের রশিদ থেকে জানা যায়, দুই হাজার তিন শত টাকা পরিশোধ করে এক রাত হাসপাতালে কাটিয়েছেন নাজমুন্নাহার। তবে হাসপাতালের রেজিস্টার ও টাকার রশিদে নাজমুন্নাহারের স্বামীর নাম লেখা আছে মোঃ নীড়। আর খুনের দায়ে আটক স্বামীর নাম রফিকুল ইসলাম। হাতাপাতালের গাইনী বিভাগের ডাক্তার কাকলি সাহার তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।
কি অসুখে নাজমুন্নাহার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এক রাত ছিলেন তা জানতে গ্রীন হাসপাতালে গিয়ে ডাঃ কাকলী সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
গ্রীন হাসপাতালের মালিক মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, অনেক রোগী আসে যায়। সব মনে থাকে না।
একটি গোপন সূত্র বলছে, গত রোজার সময় রফিকুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাসা ভাড়া নেয়। তার স্ত্রী অন্য স্বামীর ঘরে দুটি সন্তান রেখে রফিকুলের সঙ্গে ঘর বেঁধে ছিলেন। পূর্বের স্বামীর ঔরশজাত গর্ভের দুটি জমজ সন্তান বলে জানায় অসমর্থিত ওই সূত্র। ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রেমে পড়ে ঘর ছেড়ে নতুন ঘর বেঁধেছিলেন তিনি
সূত্র আরো জানায়, জনতার হাতে আটক রফিকুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করার সময় বাড়ির মালিক এ্যাডভোকেট শামীম ভূইয়া পুলিশকে বলেছেন, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী করিয়ে নেন।
এ বিষয়ে এ্যাডভোকেট শামীম ভূইয়া বলেছেন, ৬মাস পূর্বে রফিকুল ইসলাম স্ত্রী সহ বাসা ভাড়া নেন। সোমবার মধ্যরাতে রফিকুল ইসলাম বাসা ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। তাই গেটে নতুন তালা লাগিয়েছিলাম।
এই অবস্থায় পরকীয়া প্রেমিক কে তা নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। পুলিশি তদন্তে পরকীয়া প্রেমিক আবিস্কার হলে ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে বলে আশা করছেন এলাকাবাসী।