গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলেই সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করছে পুলিশ।
যদিও তারা দলীয় কোন্দল, পারিবারিক বিষয়, জেলা পরিষদ নির্বাচন, অন্যান্য শত্রুতার বিষয়গুলোকেও খতিয়ে দেখছে। তবে এ পর্যন্ত এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে যে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছিল তারা সকলেই ছিল জামায়াত-শিবির নয়তো আলাদা দলের ক্যাডার বা সমর্থক। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের মধ্যে থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে জামায়াত-শিবিরের যাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তারা হলো- মহসিন আলী (৬৫), সিরাজুল ইসলাম (৫৫), রাতুল ইসলাম (২২), লাল মিয়া (৪৫), আইয়ুব আলী (৫০), আলম মিয়া (৪৮), সানু মিয়া (২৮), ভুট্টু মিয়া (৪০), আমজাদ হোসেন (২৮), রুবেল মিয়া (১৮), আজিজুর রহমান (৫৫), গোলাম মোস্তফা (৩৮), মাহাতাব হোসেন (৩২), হাফিজ উদ্দিন (৩৬), মোজাম্মেল হক (৫০), নুরুন্নবী (৪৫), গোলাম বারী (৩৮), মমিন উদ্দিন (৩৭), আব্দুল মালেক (৩৮), মঈন উদ্দিন (৩৭) ও আব্দুল খালেক (৩০)।
খুনিদের ক্যাপের ডিএনএ টেস্ট: এমপি লিটন হত্যার দিন তার বাড়ির সামনে গাব গাছের দক্ষিণ দিকে একটি কালো রংয়ের ক্যাপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন বাড়ির সামনে মাঠে সেসময় যেসব ছেলে ভলিবল খেলছিল তারাই ক্যাপটি কুড়িয়ে পেয়ে পুলিশকে দেয়। এই ক্যাপটির বর্তমানে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, যে ২ জন খুনি লিটনকে হত্যা করার জন্য ঘরের ভেতর ঢোকে তাদের গায়ে ছিল কালো রংয়ের জ্যাকেট এবং পড়ণে ছিল কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ। ধারণা করা হচ্ছে গুলি চালিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতকদের কারো মাথা থেকে ক্যাপটি পড়ে যায়। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশের পক্ষে প্রকৃত খুনিকে সনাক্ত করতে তা উল্লেখযোগ্য সুত্র হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
লিটনের সন্তানকে ঢাকায় পুলিশি নিরাপত্তা: লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং তার একমাত্র সন্তান রাতিন লিটনের বোনদের সাথে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। রাতিন যেহেতু ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ লেভেলের ৯ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে সেজন্য স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন লিটনের স্ত্রী। তিনি গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহতি করলে ঢাকা থেকে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গেছে।
এমপি লিটনের সাথে যারা সবসময় থাকতো সেদিন তারা ছিল না: লিটন যখন বাইরে কোন প্রোগ্রামে বা সভা, সমাবেশে যেত সে সময়গুলোতে দলীয় অঙ্গ সংগঠনের যে কয়েকজন নেতাকর্মী সার্বক্ষনিক থাকতো তাদের মধ্যে সামিউল ইসলাম সামু, খন্দকার মাইদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম রানা ও আজম তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ঘটনার দিন তাদের কাউকেই এমপি লিটনের বাড়িতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, ওইদিন এমপি লিটনের বাড়ি ছিল নেতাকর্মী শূন্য।
এ ব্যাপারে সামিউল ইসলাম সামু জানান, ওইদিন ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইট হওয়ার কারণে অনেকে বিভিন্ন কারণে ব্যস্ত ছিলেন। তদুপরি সন্ধ্যায় যেহেতু এমপি লিটনের বামনডাঙ্গা অফিসে প্রতিদিনের মত আসার কথা থাকায় সেখানেই নেতাকর্মীরা এমপির অপেক্ষা করছিল। সামু আরও বলেন, লিটন এমপি বিরোধী একটি সক্রিয় চক্র এমপির ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহযোগি এবং পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে পরিকল্পনা নিয়ে হয়রানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
থার্টিফাস্ট নাইটে এমপি লিটনের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল: ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে সৈয়দপুর হয়ে বিমানে এমপি লিটনের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণেই নেতাকর্মীরা বাড়িতে আসেনি। এব্যাপারে এমপি লিটনের কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার আইয়ুব আলী জানান, ৩১ ডিসেম্বর শনিবার বিমানের টিকিট না পেয়ে ১ জানুয়ারি রোববারের টিকিট নিয়ে আসেন তিনি। আর এ কারণেই শুক্রবার রাতেই লিটন সিদ্ধান্ত নেন শনিবারের পরিবর্তে রোববার তিনি ঢাকায় যাবেন। তবে এক্ষেত্রে একটি রহস্যজনক ঘটনা হচ্ছে এমপি লিটনের নির্দিষ্ট দিনে বিমানের টিকিট না পাওয়ার কারণে এই আকস্মিক যাত্রা বিরতির সুযোগকে কিভাবে খুনিরা বেছে নিল। সেদিন ঢাকায় না যাওয়াকে কেন্দ্র করে এমপি লিটনের বাড়ি নেতাকর্মী শূন্য থাকবে খুনিরা এই তথ্য কিভাবে পেল। তদুপরি যারা সার্বক্ষনিক থাকতো সেদিন বা তারা থাকলেন না কেন? এই প্রশ্নগুলো নিয়েও পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।