সূর্য ভিলায় সাদা গাড়িতে যাতায়াত করতো অপরিচিতরা

Slider টপ নিউজ

46478_f5

 

ঢাকা; জঙ্গি মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসাকে ধরার জন্যই আশকোনার সূর্য ভিলায় রিপল-২৪ অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু মুসা ওই বাড়িতেই থাকতো না। মুসা নিজের এবং অন্য জঙ্গিদের স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে অন্য স্থানে থাকতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য ওই জঙ্গি এ কৌশল অবলম্বন করেছে বলে জানতে পেরেছেন  ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। ওই বাড়িতে অস্পষ্ট নম্বরের একটি সাদা প্রাইভেট কারের যাতায়াত ছিল। ওই প্রাইভেটকারে অপরিচিত তিনজন লোকজন আসা যাওয়া করতো। যাতায়াতকারীরা জঙ্গি হতে পারে বলে ধারণা করছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এদিকে, জঙ্গি অভিযানের ঘটনায় সিটিটিসির এক এসআই বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত করবে ডিএমপির সিটিটিসি বিভাগ। সরজমিন ও অনুসন্ধান ওইসব তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখানের আশকোনার পূর্বপাড়ার সূর্য ভিলা নামের ৫০ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। ওই ঘটনায় দুজন নিহত হয়। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সূর্য ভিলা ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গলির মধ্যে ওই বাড়ির আশপাশের লোকজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। গতকালও দিনভর ছিল বাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয়দের জটলা। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কও ছিল। তবে ওই বাড়িটির সামনের রাস্তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয় পুলিশ। গতকাল ডিবির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা সেখান থেকে ৩টি গ্রেনেড ও গুলি উদ্ধার করেছে।
ঘটনাস্থলে এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা জোনের এডিসি নুরুল আলম  মানবজমিনকে জানান, রোববার ওই বাড়িতে গ্যাস থাকার কারণে সব অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। নিহত কিশোরের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
তিনি আরো জানান, ভেতরে জঙ্গিরা ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে। সেগুলো আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও বাড়ির বামপাশে অনেক গুলি মজুত রেখেছিল জঙ্গিরা। সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়িটি আপাত তো আরো কয়েকদিন পুলিশ নজরদারিতে রাখবে। কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। পুলিশের সকল কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সেখানে ঢুকতে দেয়া হবে।
তবে ঘটনাস্থলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক সদস্য মানবজমিনকে জানান, অভিযানের পর সিটিটিসির কর্মকর্তারা ছায়াতদন্ত শুরু করে। তারা আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সিটিটিসির কর্মকর্তারা ওই বাড়ির মালিকের মেয়ে জোনাকিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বাড়ির মালিকের মেয়ের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন সিটিটিসি কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ওই বাড়িতে একটি সাদা প্রাইভেট কারের যাতায়াত ছিল। ওই প্রাইভেটকারটি আসতো খুব ভোরে। গাড়ির নম্বর ছিল অস্পষ্ট। ভালোভাবে বোঝা যেতো না। গাড়িতে তিনজন লোক আসতো। একজন যুবক এবং আরেকজন ৫০-ঊর্ধ্ব। যাতায়াতকারীরা জঙ্গি বলে ধারণা করছে সিটিটিসি কর্মকর্তারা। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। পলাতক জঙ্গি নেতা মুসা নব্য জেএমবির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যেসব জঙ্গি নিহত এবং গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের পরিবারকে দেখাশোনা করতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূর্য ভিলার পাশের বাইতুল মামুর মসজিদের এক খাদেম মানবজমিনকে জানান, বাড়িটি বছরখানেক হলো নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো পুরো কাজ সম্পন্ন হয়নি। ওই বাড়ির কোনো পুরুষকে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে দেখেননি। তবে তিনি ওই বাড়ির নিচতলায় কয়েকজনকে যাতায়াত করতে দেখেছেন। তাদের গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *