বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে কোনো আপস নয়’

Slider বাংলার আদালত

44545_f3

 

ঢাকা; আগের দিন জানানো হয় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। বলা হয়, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই। কিন্তু গতকাল সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিলো এ ব্যাপারে গেজেট করতে হবে। এ জন্য আগামী ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গতকাল নতুন আদেশ দেয়। আদালতের আগের আদেশ অনুযায়ী এদিন সকালে আপিল বিভাগে হাজির হন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক। দিনের শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়টি আপনি অবহিত করবেন। গেজেট নিয়ে আসার জন্য আমরা দুই সচিবকে ডেকেছি। কেন তারা গেজেট নিয়ে আসতে পারেননি সেই ব্যাখ্যা তাদেরকে দিতে হবে। এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইন মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দিয়েছে। রেজিস্ট্রার জেনারেলকেও এর অনুলিপি দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ বলেন, এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাদের একটি আবেদন রয়েছে। আদালত বলেন, কি আছে ওই আবেদনে? এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট জারি না করা প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন আদালতে পড়ে শোনান। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের জন্য পৃথক আচরণ বিধিমালা, শৃঙ্খলা বিধিমালা এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ ও বরখাস্তকরণ, সাময়িক বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৭ সংশোধনকল্পে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নাই মর্মে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সানুগ্রহ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।’ আপিল বিভাগ বলেন, আমরা তো খসড়া বিধিমালার কোনো প্রস্তাব দেইনি। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনার আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি বিধিমালা ১৪ বছরেও বাস্তবায়ন করেননি। সরকার শৃঙ্খলা বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়েছে। ওই খসড়ার সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যে বিধিমালা রয়েছে তার সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই। সরকার যে খসড়া পাঠিয়েছিলো মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই খসড়া সংশোধন করে দিয়েছি মাত্র। আমরা তো কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি। রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
আপিল বিভাগ আরো বলেন, নতুন নয়, সরকারের খসড়া সংশোধন করে দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে কি কোনো মন্ত্রী নেই? আমরা চাই রাষ্ট্রের একটি অঙ্গের সঙ্গে আরেকটি অঙ্গের ভারসাম্য বজায় থাকুক। এই বিভাগটিও ভারসাম্য বজায় রেখে চলুক। মন্ত্রণালয়ের যারা কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের সামান্যতম জ্ঞান থাকলে এ ধরনের চিঠি করতেন না। অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট জারি করতে আপনি একাধিকবার সময় চেয়েছেন। আমরা সময় দিয়েছি। কিন্তু গেজেট করতে পারেননি। আমরা তো আইনের খসড়া করে দেইনি। আপনারা যেটি পাঠিয়েছেন সেটি সংশোধন করে দিয়েছি। গেজেট জারি নিয়ে আপনারা ক্যামফ্লেজ সৃষ্টি করছেন।
এরপর আদালত দুই সচিবকে ডাকেন। দুজনই ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। শুরুতে মো. শহীদুল হক বলেন, আইনের খসড়া প্রণয়ন এই বিভাগ থেকে করা হয়। আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেন, আপনাদের সংশোধিত খসড়া রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। এরপর যে সিদ্ধান্ত এসেছে তার ভিত্তিতে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আপিল বিভাগ বলেন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সাত নম্বর নির্দেশনায় এই শৃঙ্খলা বিধিমালার কথা বলা হয়েছে। সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন নামমাত্র। আপনারা যেটি পাঠাবেন তিনি সেটিই করবেন। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কিছু করার আছে কি? আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যেভাবে নির্দেশনা আছে সেটিই পালন করা হয়। এসময় আপিল বিভাগ বলেন, আপনি তো বিচার বিভাগের লোক। আপনাকে ওই পদে রাখা হয়েছে সমন্বয় করার জন্য। কিন্তু আপনি ভুল করছেন। আইন সচিব বলেন, আপনারা যে আদেশ দেবেন তা বাস্তবায়ন করব। এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাতে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলো, আমি বিচারাধীন বিষয় বলে কোনো বক্তব্য দেইনি। আপিল বিভাগ বলেন, সাংবাদিকদের এর মধ্যে টেনে আনছেন কেন? এই শৃঙ্খলা বিধিমালার সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি জড়িত। কথায় আছে যার হাতে খড়গ থাকে তার কথায় চলতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেন, মাসদার হোসেন মামলার রায় আপনারা মেনে নিয়েছেন। রায়ের ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট জারি করে নিয়ে আসুন। এ জন্য ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হলো। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই বার্তাটি তো কনভয় করতে হবে। আরো সময় দরকার। আপিল বিভাগ বলেন, মাসদার হোসেন মামলার রায় দু’বার রিভিউ করা হয়েছে। এরপর আর ওই রায়ে হাত দেয়া সম্ভব নয়। আপিল বিভাগ বলেন, একমাস তো কম সময় নয়। যথেষ্ট। গেজেট জারি করতে তো মন্ত্রিসভা বা সংসদে যেতে হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *