মেয়রের চেয়ার থেকে কত দূরে আরিফ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সিলেট

42125_rif

 

   সিলেট; সিলেটের সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মাথার উপর ঝুলছে দুটো মামলা। দুটোই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মূল হত্যা মামলা, অন্যটি হত্যাসংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক মামলা। এ দুটো মামলা কাঁধে নিয়ে সিলেটের  কারাগারে বন্দি আছেন আরিফুল হক চৌধুরী। অবশ্য উচ্চ আদালত থেকে দুটো মামলাতেই জামিন পেয়েছেন তিনি। কারাগারেও পৌঁছে গেছে জামিন আদেশ। তবুও মুক্ত হতে পারছেন না। অন্য একটি মামলায় তাকে সুনামগঞ্জের আদালতে হাজির করতে কারাগারের প্রতি আদেশ থাকায় থমকে আছে তার মুক্তি প্রক্রিয়া। আজ এ মামলায় আরিফুল হককে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। এ হাজিরার পর নতুন করে যদি কোনো দায় না চাপে তবে আর কোনো বাধা নেই আরিফুল হকের মুক্তিতে। আবার তিনি মুক্তভাবে পথ চলতে পারবেন প্রিয় নগরে-এমনটাই প্রত্যাশা তার শুভার্থী-অনুসারীদের।
আরিফুল হক চৌধুরীর শুভানুধ্যায়ীদের কারো কারো প্রত্যাশা অবশ্য আরো একটু বেশিই। তারা স্বপ্ন দেখছেন নগর ভবনের শীর্ষ চেয়ারটিতে বসার অধিকারও ফিরে পাবেন আরিফুল হক। তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির স্বপদে ফিরে আসার প্রক্রিয়াটি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মনিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে খুলনার মেয়রের দায়িত্ব। আরিফুল হকের মতো তিনিও মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া বহিষ্কারের সে আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মনি। তার দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বহিষ্কারাদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত রাখেন। পরে আপিলেও সে সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় সরকার মনিরুজ্জামান মনিকে খুলনার মেয়র পদে পুনর্বহাল করে।
কারাগার থেকে মুক্ত হবেন, আবার ফিরে পাবেন মেয়রের দায়িত্ব-আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে শুভার্থী-অনুসারীরা এমন স্বপ্ন দেখছেন হাইকোর্ট থেকে তার স্থায়ী জামিন লাভের পর থেকেই। আরিফুল হকের বিরুদ্ধে থাকা দুটো মামলার মধ্যে কিবরিয়া হত্যা ঘটনায় দায়ের হওয়া মূল মামলায় গত ৬ই সেপ্টেম্বর আরিফুল হক চৌধুরীকে জামিন প্রদান করেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৮ই সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সে আবেদন নাকচ করে দেন। অপরদিকে ১৩ই নভেম্বর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আরিফুল হক চৌধুরীকে হত্যা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক মামলায়ও জামিন দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন পরদিনই খারিজ করে দেন চেম্বার জজ সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় আদালতে হাজিরা না থাকলে এতোদিনে কারাগারের বন্দি জীবন ঘুচতো আরিফুল হকের। কারণ যে দুটো মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আরিফুল হক কারাগারে বন্দি আছেন-দুটো মামলাতেই উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েছেন তিনি। আপিলেও স্থগিত হয়নি সে জামিন। তাই তার কারামুক্তিতে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু তার আগেই কারাগারের প্রতি আদালতের একটি নির্দেশনা আসে। ২০০৪ সালের ২১শে জুন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সদরের জগন্নাথ জিওর মন্দিরের কাছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় আরিফুল হককে হাজির করা হয়। কারণ ঐ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন আরিফুল হক চৌধুরীকেও ঐ মামলায় আসামি করা হয়। আজ এ মামলায় আরিফুল হককে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭শে জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যেরবাজারে ঈদ-পরবর্তী এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় মৃত্যু হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার। এ মামলায় সংশোধিত সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয় তিনি তখন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র। সেই সংশোধিত সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১৪ সালের ২১শে ডিসেম্বর মেয়র আরিফুলসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ঐ বছরের ৩০শে ডিসেম্বর আরিফুল বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তা নাকচ করে দিলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গত ২২শে মার্চ মায়ের অসুস্থতার কারণে হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ১৫ দিনের জন্য জামিন দিয়েছিলেন। জামিনে মুক্তির পর ১০ই এপ্রিল আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। কারাগারে থাকাবস্থায়ই আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় আরিফুল হককে যুক্ত করতে আদালতে আবেদন করেন ঐ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হবিগঞ্জ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *