ছবি প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরও  পরিচয় জানা যাচ্ছে না

Slider জাতীয় সারাদেশ

2016_10_10_05_33_40_7051_d11

ঢাকা; গাজীপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন সাত জঙ্গির ছবি প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরও সবার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‍্যাবের অভিযানে নিহত পাঁচজনের পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ দুজনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে বলে জানায়। তাঁদের একজন ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ, অন্যজন মো. ইব্রাহিম। মো. ইব্রাহিমের বাবা আজিমউদ্দিন গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে গিয়ে ছেলের ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। এর বাইরে আরও কয়েকজন অভিভাবক এসেছিলেন তাঁদের নিখোঁজ থাকা ছেলেদের ছবি নিয়ে। সেসব ছবির সঙ্গে নিহত কারও মিল পাওয়া যায়নি।

স্পেট ৮ নামের ওই অভিযানে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ নেতৃত্ব দিলেও, বগুড়া গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল যুক্ত ছিল বলে জানা যায়। জঙ্গিবাদ থেকে সরে এসেছে এমন একটি সূত্র গাজীপুরের নোয়াপাড়ার পাতারটেকের আস্তানা সম্পর্কে খোঁজ দেয় বলে জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ সম্পর্কে তাঁদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল। তবে ওই আস্তানায় অভিযানের সময় কারা কারা ছিলেন সে সম্পর্কে সূত্রটি জানাতে পারেনি। তবে অভিযানে সবাই নিহত হওয়ায় তাঁদের হামলার কোনো পরিকল্পনা ছিল কি না, সে সম্পর্কে পুলিশ জানতে পারেনি।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন  বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ধাণো, ওই আস্তানাটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওই কেন্দ্রে জঙ্গিরা উগ্রবাদে জড়ানোর তালিম ও অস্ত্র চালনার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পেত। অভিযানে নিহত ফরিদুল ইসলাম সমন্বয়কের কাজ করতেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, অভিযানে নিহত ফরিদুল ছিলেন তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর। তামিমের অপর ঘনিষ্ঠ সহচর নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান।

গাজীপুরে পুলিশ যে জায়গায় অভিযান চালায়, তার এক কিলোমিটারের মধ্যে অভিযান চালায় র‍্যাব। গাজীপুরের হাঁড়িনালে নিহত দুই সন্দেহভাজন জঙ্গির নামও গতকাল পর্যন্ত জানা যায়নি। ওই ঘটনায় রোববার সন্ত্রাস দমন আইনে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের কাগমারায় র‍্যাবের অভিযানে নিহত কারা, সে সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব-১২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী। গতকাল তিনি বলেন, নিহত দুজনের লাশ নিতে কেউ আসেনি। তাঁদের লাশ টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। র‍্যাব প্রথমে বলেছিল, নিহতদের নাম আতিকুর রহমান ও সাগর হোসেন এবং দুজনের বাড়িই রাজশাহীর চারঘাটে। পরে তারা জানায়, যে বাড়িতে তাঁরা ছিলেন, সেই বাড়িতে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। সেখানে ওই নাম-ঠিকানাগুলো লেখা ছিল। পরিচয়পত্র দুটি ভুয়া বলে মনে করছেন তাঁরা।

নিহত ‘আবদুর রহমান’ কে? : আশুলিয়ায় র‍্যাবের অভিযানের সময় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়া ব্যক্তির পরিচয় নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। র‍্যাব দাবি করছে, ওই ‘আবদুর রহমান’ জেএমবির অর্থের জোগানদাতা ছিলেন। এর আগে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ জানায়, জেএমবির টাকাপয়সার দিকটি দেখভাল করেন বাশারুজ্জামান। গতকাল পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির নাম আবদুর রহমান কি না বা তিনি কী করতেন, তাঁর বাড়ি কোথায়—সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তবে নিহত ওই ব্যক্তির স্ত্রীর নাম শাহনাজ আক্তার রুমি বলে জানা গেছে। তাঁর বাবার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চন্দরিয়া বিজিবি ক্যাম্পের কাছে নাকারহাট চৌরাস্তায়। শাহনাজের বাবার নাম আবদুর রহমান। গতকাল শাহনাজদের গ্রামের বাড়িতে গেলে তাঁর মা সফুরা খাতুন  বলেন, ‘রুমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে চলে যায়। সাত-আট বছর আগে নিজেই এক ছেলেকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসে। তখন বলেছিল, ছেলেটার নাম মোক্তারুল ইসলাম। বাড়ি বগুড়ায়। সে-ও গার্মেন্টসে চাকরি করে। এরপর আর কখনো বাড়ি আসেনি। শুনেছি তার একটা ছেলে আছে।’ আশুলিয়া থানার পুলিশ গতকাল শাহনাজ আক্তারকে আদালতে পাঠায়। আদালত তাঁকে দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন।

র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ ওই ব্যক্তি বেঁচে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি লোকটি জেএমবির অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করত। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে এবং দেশের ভেতর থেকেও টাকা তুলত।’ তিনি আরও জানান, ‘আবদুর রহমানের’ স্ত্রী শাহনাজ তাঁদের একবার বলেছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, আরেকবার বলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করা হচ্ছে। র‍্যাবের তিনটি অভিযানেই বেশ কিছু ল্যাপটপ ও গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার হয়েছে বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *