গ্রাম বাংলা ডেস্ক: খুলনার পাইকগাছায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১৩ জনের স্বজনেরা দাবি করেছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়, গুলি করে তাঁদের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার নিহত একাধিক ব্যক্তির স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ দাবি করেন। তাঁরা বলছেন, ‘তাঁদের এভাবে না মেরে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে পারত পুলিশ।’
গতকাল রোববার ভোরে এবং দুপুরে পাইকগাছা উপজেলার জিরবুনিয়া ও গাংরক্ষীর লক্ষ্মীরচর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওই ১৩ জন নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন বলে দাবি পুলিশের।
আজ দুপুরের পর নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনেরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ নিয়ে যান।
আজ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আখিরুল শেখ ও নাসরুল শেখের লাশ নিতে এসেছিলেন তাঁদের মামাতো ভাই মো. আল-আমিন। তিনি দাবি করেন, ‘তাঁরা খারাপ ছিল না। সঙ্গ দোষে হয়তো খারাপ কাজে যোগ দিয়েছিল।’
নিহত রুবেল শেখের চাচাতো ভাই মহসীন শেখ জানান, রুবেলের হাত-পা ভাঙা রয়েছে। বাঁ চোখের নিচে খোঁচানো দাগ। তাঁর গায়ে কোথাও গুলির চিহ্ন নেই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধরে পিটিয়ে আধমারা করেছে, পরে পুলিশ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়ে বাকি কাজ শেষ করেছে।’
নাম প্রকাশ না করে নিহত একজনের ভাই বলেন, ‘আমার ভাই ডাকাত হতেই পারে। কিন্তু দেশে তো আইন আছে। আইনে তাঁদের বিচার করা যেত।’ তিনি বলেন, পুলিশ তাঁদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেল, কাশেম বাহিনী পুলিশের ওপর আক্রমণ করল, তখন ওই ১১ জন নিহত হলো। কাশেম বাহিনীর আর কেউ নিহত বা আহত হলো না, পুলিশেরও কিছু হলো না। আসলে পুলিশ “বন্দুকযুদ্ধের” নাটক করে ঠান্ডা মাথায় তাদের হত্যা করেছে।’
খুলনায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৩ বনদস্যু নিহত
আজ ঘটনাস্থল লক্ষ্মীরচর ও জিরবুনিয়া গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনদস্যুরা স্থানীয় বারআড়িয়া কলেজের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার ঢালীকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় এলাকাবাসী ওই ১৩ জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ তাঁদের নিয়ে সুন্দরবনে অস্ত্র উদ্ধারে যায়। সুন্দরবনের কয়েকটি স্থানে তারা তল্লাশি চালায়। বিকেলের দিকে তাঁদের লাশ ট্রালারে করে নিয়ে পুলিশ পাইকগাছা থানায় ফিরে যায়। তাঁরা এর বেশি কিছু দেখেনি, কেবল গুলির শব্দ শুনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গড়ইখালী এলাকার এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আমরা দেখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আটক ব্যক্তিদের নিয়ে বনের মধ্যে ঢুকে গেলে আর কিছু দেখা যায়নি। দেশে এর আগে “বন্দুকযুদ্ধে” এত প্রাণহানির কথা কখনো শুনিনি। এই ঘটনায় এলাকার মানুষ হতভম্ব হয়ে গেছে। ’
পাইকগাছা বেলুটি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ইনচার্জ) কর্মকর্তা মো. জলিল বলেন, কাশেম বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তাঁরা সবাই মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের দাবি নাকচ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাজ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। খুলনার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন পাইকগাছা উপজেলার মাগুরা দেলুটির সবুর মোড়ল (৪০), দাকোপ কালাবগীর মো. হানিফ গাজী (৩৪), মংলার চিকনের দেওয়ান এলাকার আলিম মোল্লা (২৭), ডুমুরিয়ার টিপনা এলাকার আখিরুল শেখ (২৬) ও আফজাল শেখ (২৫), একই উপজেলার স্বরাপপুর এলাকার মাহাবুব মোল্লা (৩০) ও মফিজুল মোল্লা (৪১), টিপনা এলাকার শফিকুল শেখ (২১), নাসরুল শেখ (২৪), গোলনা গ্রামের রুবেল শেখ (২৩), জুনায়েদ খান (৩৫), ডুমুরিয়া থানার পার্শ্ববর্তী এলাকার কারিমুল (৪৫) ও তেলিখালী গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪০)।