টঙ্গী: ট্যাম্পাকো প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধার কর্মীরা। নিখোঁজ রয়েছেন ১১জন। নিখোঁজের তালিকা এবং নিহতদের উদ্ধারকাজ তদারকি করার জন্য কারখানার পাশেই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- সুভাষ চন্দ্র প্রসাদ (৩৫), জাহাঙ্গীর আলম (৪০), রফিকুল ইসলাম (২৮), আবদুর রাশেদ (২৫), আবদুল হান্নান (৫৬), ইদ্রিস আলী (৪০), গোপাল দাস (২৫), সঙ্কর (২৫), আল-মানমুন (৪০), এনামুল হক (৩৮), সোলেমান (৩৫), আনিসুর রহমান (৫০), ওয়ালি হোসেন (৩৫), মাইনুদ্দিন (৩৫), সাইদুর রহমান, হাসান সিদ্দিকী (৫০), মামুন ওরফে ক্লিনার মামুন (৪০), মিজানুর রহমান (২৫), রুজিনা, রিপন দাস (৩০), আনোয়ার হোসেন (৪০), অহিদুজ্জামান তপন (৩৬), দেলোয়ার হোসেন (৫০), তাহমিনা আক্তার (২০), আসিক (১৪)সহ ২৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
কারখানার আশপাশে ভিড় করছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। নিখোঁজরা হলো- জহিরুল ইসলাম (৩৭), রাজেশ বাবু (২২), রিয়াজ হোসেন মুরাদ, ইসমাইল হোসেন (৪৫), আনিসুর রহমান (৩০), রফিকুল ইসলাম (৪০), নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, মাসুম আহম্মেদ (৩০), চুন্নু মোল্লা (২২), আজিম উদ্দিন (৩৫), মোরাদ (১৯)। নিখোঁজদের খুঁজে স্বজনরা কারখানার আশপাশে ভিড় করছেন। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ। কেউ পারছে না তাদের সান্ত্বনা দিতে। নিখোঁজ মুরাদের বাবা আবু তালেব বলেন, গত শুক্রবার রাত ১০টায় তার ছেলে মুরাদ কারখানায় ঢোকার আগে মোবাইল ফোনে কথা হয়। এ ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল খোঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ আজিম উদ্দিনের স্ত্রী পারভিন বলেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৫টায় বাসা থেকে বের হয় কারখানায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এরপর থেকে তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের লোকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তার স্বামীর লাশটিও যেন বের করে তাকে ফেরত দেয়। এ কথা বলে আহাজারি করছেন। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
ট্যাম্পাকো প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে পুরো কারখানার আগুন ৩৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে গতকাল বিকাল ৫টায় ওই কারখানার পাঁচ তলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। পাঁচতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আমিন মিয়া জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরোপুরি নিভে গেলে ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হবে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আমিন মিয়া বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করে। এর সঙ্গে দুটি হাইরাইজ ভেহিকেল রয়েছে। পাশাপাশি তিনটি লাইটিং ইউনিটও আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে। পুরো কারখানায় আগুন লেগেছিল। ভেতরে অনেক কাগজ, রোল মজুদ ছিল। কিছু ফুয়েলও ছিল। দাহ্য পদার্থের কারণে বার বার আগুন জ্বলে উঠছে। কর্নেল মোশাররফ জানান, বুয়েটের দুজন ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার ও রাজউকের ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের সবার সমন্বয়ে একটি টিম তৈরি কার হয়েছে।
তিনি জানান, এই টিমের অভিমত হলো- ৫তলা ভবনও যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে। তাই ফায়ার সার্ভিসের টিম যেন নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন কারখানায় অ্যামোনিয়াম জাতীয় গ্যাস সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু এখানে এ ধরনের গ্যাস আমরা শনাক্ত করতে পরিনি। তবে এখানে এমন কিছু কেমিকেল ছিল যা বিস্ফোরণে সহায়তা করে।’ শনিবার ভোরে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে বিকট আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। মুহূর্তেই ভবনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আগুনের লেলিহান শিখা। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ জন নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক। ধসে পড়ে কারখানা ভবন।
বয়লার বিস্ফোরণ নিয়ে রহস্য: বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাসলাইন লিক হয়ে ট্যাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী। শনিবার ট্যাম্পাকো কারখানা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যাম্পাকো কারখানায় দুটি বয়লার রয়েছে। এগুলো ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নবায়ন করা আছে।
তিনি বলেন, আমরা বয়লার রুম পরিদর্শন করে দেখেছি, অগ্নিকাণ্ডের পরও কারখানার দুটি বয়লার অক্ষত আছে। তাই বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লিকেজ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
কারখানার বয়লার অপারেটর ইনচার্জ ইমাম উদ্দিন বলেন, কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমরা বয়লার রুমে গিয়ে দেখেছি বয়লার দুটি এখনও অক্ষত আছে। তবে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে কারখানায় গ্যাসলাইনে লিকেজ সৃষ্টি হয়েছিল। সে কারণে হয়তো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার পর থেকে কারখানার আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে স্বজনরা: গতকাল রোববার টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানা গেটে, হাসপাতাল ও থানায় শ্রমিকদের স্বজনরা নিখোঁজ শ্রমিকদের ছবি হাতে নিয়ে দ্বিগদ্বিগ ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। কারখানার সন্নিকটের উড়াল সেতুর নিচে ১১জন শ্রমিকের আত্মীয়স্বজনকে তাদের খোঁজে কান্নাকাটি করে সারাদিন অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকের হাতে রয়েছে নিখোঁজ শ্রমিকদের ছবি। অপেক্ষমাণ নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা বুঝে উঠতে পারছিল না, কোথায় গেলে তাদের স্বজনের খোঁজ মিলবে। টঙ্গী হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা তাদের খোঁজ করতে দেখা গেছে।
ট্যাম্পাকো পরির্দশনে শিল্পমন্ত্রী: টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীতে প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারও গাফিলতি থেকে থাকলে তাদের শাস্তি হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু। গতকাল সকালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ট?্যাম্পাকো কারখানা ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন,“কারখানায় হতাহতের ঘটনায় যদি কারও গাফিলতি থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, “দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে।”
রোববার সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, “শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত করে আমরা দেখব, এ ঘটনা কেন ঘটল। এ ঘটনার মাধ্যমে যে এতগুলো প্রাণ গেল, এজন্য আমরা খুবই মর্মাহত।” ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন?্য তদন্ত সাপেক্ষ পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি শিল্প নগরীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তা তদন্ত করে দেখার জন্য। মন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস?্য জাহিদ আহসান রাসেল, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরো একজনের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার জানান, গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে মারা যান তিনি। তার নাম রিপন দাশ (৩৫)। এরমধ্যে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় জনের মৃত্যু হলো। রিপনের দেহের ৯০ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে শনিবার জানিয়েছিলেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল। পার্থ শঙ্কর পাল জানান, বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো রিপন দাশকে। আগুনে শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাঁচানো যায়নি তাকে। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৩ জনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে রিপন দাশসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে ঢামেক হাসপাতালে। গুরুতর আহত আশিক (১২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকালে মারা গেছে। তার আগে এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার হোসেন (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৪৫), ওয়াহেদুজ্জামান স্বপন (৩৫) ও তাহমিনা আক্তার (২০)। নিহত রিপন দাশ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের মুকুন্দ দাশের পুত্র। দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো কারখানায় কাজ করতেন তিনি।
ট্যাম্পাকো প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে পুরো কারখানার আগুন ৩৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে গতকাল বিকাল ৫টায় ওই কারখানার পাঁচ তলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। পাঁচতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আমিন মিয়া জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরোপুরি নিভে গেলে ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হবে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আমিন মিয়া বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করে। এর সঙ্গে দুটি হাইরাইজ ভেহিকেল রয়েছে। পাশাপাশি তিনটি লাইটিং ইউনিটও আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে। পুরো কারখানায় আগুন লেগেছিল। ভেতরে অনেক কাগজ, রোল মজুদ ছিল। কিছু ফুয়েলও ছিল। দাহ্য পদার্থের কারণে বার বার আগুন জ্বলে উঠছে। কর্নেল মোশাররফ জানান, বুয়েটের দুজন ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার ও রাজউকের ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের সবার সমন্বয়ে একটি টিম তৈরি কার হয়েছে।
তিনি জানান, এই টিমের অভিমত হলো- ৫তলা ভবনও যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে। তাই ফায়ার সার্ভিসের টিম যেন নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন কারখানায় অ্যামোনিয়াম জাতীয় গ্যাস সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু এখানে এ ধরনের গ্যাস আমরা শনাক্ত করতে পরিনি। তবে এখানে এমন কিছু কেমিকেল ছিল যা বিস্ফোরণে সহায়তা করে।’ শনিবার ভোরে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে বিকট আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। মুহূর্তেই ভবনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আগুনের লেলিহান শিখা। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে বিসিক শিল্পনগরী। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ জন নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক। ধসে পড়ে কারখানা ভবন।
বয়লার বিস্ফোরণ নিয়ে রহস্য: বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাসলাইন লিক হয়ে ট্যাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী। শনিবার ট্যাম্পাকো কারখানা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যাম্পাকো কারখানায় দুটি বয়লার রয়েছে। এগুলো ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নবায়ন করা আছে।
তিনি বলেন, আমরা বয়লার রুম পরিদর্শন করে দেখেছি, অগ্নিকাণ্ডের পরও কারখানার দুটি বয়লার অক্ষত আছে। তাই বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লিকেজ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
কারখানার বয়লার অপারেটর ইনচার্জ ইমাম উদ্দিন বলেন, কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমরা বয়লার রুমে গিয়ে দেখেছি বয়লার দুটি এখনও অক্ষত আছে। তবে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে কারখানায় গ্যাসলাইনে লিকেজ সৃষ্টি হয়েছিল। সে কারণে হয়তো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার পর থেকে কারখানার আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে স্বজনরা: গতকাল রোববার টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানা গেটে, হাসপাতাল ও থানায় শ্রমিকদের স্বজনরা নিখোঁজ শ্রমিকদের ছবি হাতে নিয়ে দ্বিগদ্বিগ ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। কারখানার সন্নিকটের উড়াল সেতুর নিচে ১১জন শ্রমিকের আত্মীয়স্বজনকে তাদের খোঁজে কান্নাকাটি করে সারাদিন অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকের হাতে রয়েছে নিখোঁজ শ্রমিকদের ছবি। অপেক্ষমাণ নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা বুঝে উঠতে পারছিল না, কোথায় গেলে তাদের স্বজনের খোঁজ মিলবে। টঙ্গী হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা তাদের খোঁজ করতে দেখা গেছে।
ট্যাম্পাকো পরির্দশনে শিল্পমন্ত্রী: টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীতে প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারও গাফিলতি থেকে থাকলে তাদের শাস্তি হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু। গতকাল সকালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ট?্যাম্পাকো কারখানা ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন,“কারখানায় হতাহতের ঘটনায় যদি কারও গাফিলতি থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, “দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে।”
রোববার সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, “শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত করে আমরা দেখব, এ ঘটনা কেন ঘটল। এ ঘটনার মাধ্যমে যে এতগুলো প্রাণ গেল, এজন্য আমরা খুবই মর্মাহত।” ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন?্য তদন্ত সাপেক্ষ পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি শিল্প নগরীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তা তদন্ত করে দেখার জন্য। মন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস?্য জাহিদ আহসান রাসেল, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরো একজনের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার জানান, গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে মারা যান তিনি। তার নাম রিপন দাশ (৩৫)। এরমধ্যে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় জনের মৃত্যু হলো। রিপনের দেহের ৯০ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে শনিবার জানিয়েছিলেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল। পার্থ শঙ্কর পাল জানান, বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো রিপন দাশকে। আগুনে শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাঁচানো যায়নি তাকে। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৩ জনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে রিপন দাশসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে ঢামেক হাসপাতালে। গুরুতর আহত আশিক (১২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকালে মারা গেছে। তার আগে এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার হোসেন (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৪৫), ওয়াহেদুজ্জামান স্বপন (৩৫) ও তাহমিনা আক্তার (২০)। নিহত রিপন দাশ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের মুকুন্দ দাশের পুত্র। দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো কারখানায় কাজ করতেন তিনি।