এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিজিবির সুনামকে অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থরক্ষা ও উন্নয়নে আরও নিবেদিত হওয়ারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এ দেশটি আমাদের সবার। আসুন, সবাই মিলে কাজ করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বনির্ভরতা অর্জনে প্রতিটি বাহিনীকে সরকার সহায়তা করতে চায়। আজ যে সীমান্ত ব্যাংক চালু হচ্ছে, তা বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। তিনি আশা করেন, ‘বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ আরও নতুন নতুন উপার্জনশীল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাংকের আয় বিজিবির মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পেনশন স্কিম, গৃহনির্মাণ ঋণ, দুরারোগ্য রোগের জন্য দেশে-বিদেশে চিকিৎসা–সহায়তা, কৃষিঋণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মতো বহুবিধ খাতে ঋণসহায়তা প্রদান করবে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা প্রদান করবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিজিবির নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত ‘আলোকিত সীমান্ত’ ও ‘সমৃদ্ধির পথে সীমান্ত’-এর মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নেও এই ব্যাংক সহায়তা দেবে, যা সীমান্ত অপরাধ রোধে ভূমিকা রাখবে। বিজিবি সদস্যের যোগ্য সন্তানদের এ ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যা বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা রাখবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হিসেবে বিজিবি তাদের ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব গভীর দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা ও দেশগঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিজিবির ভূমিকা ও পেশাদারি আজ সর্বমহলে প্রশংসিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, সরকারি সম্পদ ধ্বংস, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার ও সীমান্ত অপরাধ অনেকটা কমেছে। বিজিবি-বিএসএফ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কারণে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নাগরিক আটক হলে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রথম গ্রাহক হিসেবে নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিতে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। অনুষ্ঠানে সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোখলেসুর রহমান ব্যাংকটির ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
এ বছরের ২১ জুলাই সীমান্ত ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘তফসিলি ব্যাংক’ হিসেবে নথিবদ্ধ হয় এবং ১ আগস্ট এটি গেজেটভুক্ত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সাংসদ, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।