যেভাবে গ্রেপ্তার হন ওবায়দুল

Slider গ্রাম বাংলা নারী ও শিশু বাংলার সুখবর

1b4bf65f9e19b85dc1798914020b74ee-Online_Nilphamari-Pic-Obaydul

 

  

 নীলফামারী:  লোকটির আচরণ ছিল সন্দেহজনক। বাসযাত্রী মনে হলেও তাঁকে কোনো বাসে উঠতে দেখা গেল না। আগের দিন পুলিশ বাজারে এসে যে লোকের ছবি দেখিয়েছিল, সেটার সঙ্গে এই লোকের চেহারাতেও মিল রয়েছে। একপর্যায়ে তাঁকে কৌশলে আটকে রেখে খবর দিই পুলিশকে।’ পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে বেড়ানো ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিসা (১৪) হত্যা মামলার আসামি ওবায়দুল খানকে (২৯) গ্রেপ্তারে এভাবেই সহযোগিতা করেন নীলফামারীর মাংস ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন। দুলাল হোসেনের দেওয়া তথ্য অনুসারে ঘটনার পাঁচ দিন পর গ্রেপ্তার হন ওবায়দুল।

জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকার পর মঙ্গলবার দুপুরের পর নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার সোনারায় আশ্রয় নেন ওবায়দুল খান। এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতভর ওই এলাকায় ডিএমপি ও নীলফামারী পুলিশ এবং র‌্যাব-১৩ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় পুলিশ ওবায়দুলের ছবি এলাকাবাসীকে দেখিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চায়।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ওই বাজারে দোকান খুলতে আসেন মাংস ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন (৪০)। এ সময় তিনি বাজারে একজন অপরিচিত লোককে দেখতে পান। সন্দেহ হওয়ায় তিনি ইজিবাইকচালক ইসমাইল হোসেনকে (৩৫) সঙ্গে নিয়ে কৌশলে আটকে রাখেন ওই লোককে।

আজ দুপুরে ডোমার থানার সামনে কথা হয় মাংস ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন ও ইজিবাইকচালক ইসমাইল হোসেনের (৩৫) সঙ্গে। ইসমাইল হোসেনের বাড়ি সোনারায় চৌকিদার পাড়ায় এবং দুলাল হোসেনের বাড়ি উত্তর হরিণচড়া গ্রামে।

দুলাল বলেন, ‘লোকটিকে বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখি। তখন মনে হয়েছিল কোনো বাসযাত্রী হবেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বিআরটিসির একটি বাস এসে থামল, বাসটি নীলফামারীর পথে ছেড়েও গেল। কিন্তু লোকটি উঠলেন না। আমার সন্দেহ হলো। এরপর দেখি ওই লোক হেঁটে বাজার থেকে পাকা সড়ক ধরে যাচ্ছেন।’

এমন সময় দুলালের সঙ্গে দেখা হয় এলাকার ইজিবাইকচালক ইসমাইল হোসেনের। তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। পরে দুজনে মিলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাজার থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে লোকটির সঙ্গে কথা বলেন। ইসমাইল দুলালকে জানান, পুলিশ গতকাল যে ছবি দেখিয়েছে, এই লোক ওই ব্যক্তিই।

দুলাল বলেন, ‘আমরা কৌশলে ওই লোককে মোটরসাইকেলে তুলি। আমরা তাঁকে নানাভাবে প্রশ্ন করি। একপর্যায়ে আমাদের কাছে সে স্বীকার করে। তাঁকে বাজারে নিয়ে আসি। তিনি গত রাত থেকে কিছু খাননি বলে জানান। তাঁকে হোটেলে নাশতা খাওয়াই। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে সকাল আটটার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।’

ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এলাকায় ওবায়দুলের ছবি দেখায় পুলিশ। পুলিশের দেখানো ওই ছবির সঙ্গে মিল থাকায় থানায় খবর দিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে পুলিশ যখন অভিযান চালায়, তখন ওবায়দুল একটি জঙ্গলে বসে তা প্রত্যক্ষ করেছে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন।’

ঢাকা রমনা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘১৫ সদস্যের একটি দল নিয়ে ওবায়দুলকে গ্রেপ্তারে গত পাঁচ দিন ধরে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী এলাকায় অবস্থান করছি। এরপর খবর পাই ওবায়দুল ডোমার এলাকায় অবস্থান করছেন। তাঁকে ধরতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আজ সকালে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।’

ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ রাজিউর রহমান জানান, আজ সকালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উপজেলার সোনারায় বাজার থেকে ওবায়দুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নীলফামারী পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বুধবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে পুলিশ, র‌্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ অভিযানে ঢাকার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী হত্যা মামলার আসামি ওবায়দুল খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে নিয়ে ঢাকার রমনা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এইচ এম আজিমুল হক ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

উল্লেখ্য, ২৪ আগস্ট (বুধবার) উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের পদচারী-সেতু দিয়ে সড়কের ওপারে যাওয়ার সময় এক বখাটে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিসাকে ছুরিকাঘাত করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ আগস্ট রিসা মারা যায়। এ ঘটনায় ২৫ আগস্ট রিসার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। ওবায়দুল দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মীরাটঙ্গী গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *