‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আপসকামিতা ঢুকে গেছে’

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

th

 

সামরিক-বেসামরিক, আমলাতন্ত্র ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রভাবশালী পর্যায়ে জঙ্গিবাদের সমর্থক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। বাংলাদেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিবাদ সমর্থক কিংবা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আছে, সেই মানুষগুলো বসে আছে। গতকাল রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটির মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় যুব কনভেনশনে তিনি এ কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সুলতানা কামাল আরও বলেন, যারা ’৭৫-এর বেনিফিশিয়ারি তারা সবাই ছিল পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষিত। জঙ্গিবাদের অত্যন্ত প্রকট, উৎকট, নৃশংস রূপ আমরা দেখছি। জঙ্গিবাদের ধারা সেই সময় (১৯৭৫ সাল) থেকে বাংলাদেশে ধীরে ধীরে সমস্ত কিছুর মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে। ’৭৫ থেকে ’৯০ পর্যন্ত সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেটা ঘটেছে। ’৯০ পরবর্তী সময়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে নিজেদের দাবি করে, তাদের মধ্যে আমরা স্পষ্টভাবে আপসকামিতা দেখতে পেয়েছি। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কারো কারো মধ্যে আপসকামিতা ঢুকে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একদিকে সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, অন্যদিকে যারা এটা (জঙ্গিবাদ) প্রতিরোধ করতে পারতো তাদের মধ্যে আপসকামিতা ঢুকে গেছে। কারণ, ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়া তাদের কাছে অনেক বড় একটা বিষয়। রাজনীতির চরিত্র সেটা দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। গণজাগরণ আন্দোলনের কর্মী রাজীব হায়দারসহ ব্লগার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সুলতানা কামাল বলেন, আজকে হোলি আর্টিজানের কথা বলছি। প্রচণ্ডভাবে নাড়া খেয়েছি আমরা। আমরা কি নাড়া খেয়েছি যখন অভিজিৎকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে? আমরা কি নাড়া খাইনি যখন রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে? দীপন কে হত্যা করা হয়েছে। যদি নাড়া না খেয়ে থাকি, কেন খাইনি? কেন তখন আমাদেরকে এইভাবে বিচলিত করেনি? কারণ ভেতরে ভেতরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটার পরিবেশটাকে তৈরি করে নেয়া হয়েছে। চিহ্নিত তিন জঙ্গির বিচার শুরু না হওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, তিনজন অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের জঙ্গির বিচার শুরু করা যায়নি। এক মন্ত্রণালয় আরেক মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি (সিপিবি) মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যুব সমাজকে ঠিকমতো অ্যাড্রেস করতে না পারলে দানবের (জঙ্গিবাদ) বিরুদ্ধে সংগ্রাম সফল হতে পারবেন না। বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ‘ইতিহাসের শাস্তি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সাংস্কৃতিক বিপ্লব করার দরকার ছিল। খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে সিপিবি সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে যাবজ্জীবন- এই ব্লাসফেমি আইন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না; হিতেবিপরীত হয়ে যাবে। ধর্মের মত ইতিহাস নিয়ে ব্লাসফেমি আইন করা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাদেকা হালিম নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তিনজনের নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করছি। ছেলেমেয়েরা কেন যোগ দিচ্ছে- সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা খবর পেয়েছি, নারায়ণগঞ্জে তিনজন এনকাউন্টারে মারা গেছে। এনকাউন্টার সমাধান কিনা সেটা দেখতে হবে। এর বীজ অনেক গভীরে।
যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক অজয় রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ঐক্য ন্যাপের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শিশির চক্রবর্তী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *