গ্রাম বাংলা ডেস্ক: নিয়ম লঙ্ঘন করে গেজেট প্রকাশ করায় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দুই হাজার ৩৬৭ জনের তালিকা বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার চিঠি দিয়ে এ গেজেট বাতিলের বিষয়টি জানিয়ে দেবে মন্ত্রণালয়।
২০১৩ সালের ৪ আগস্ট জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২-এর ৭ ধারা অনুযায়ী এ গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই গেজেটেই জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ওএসডি হওয়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব মাসুদ সিদ্দিকীর নাম।
এদিকে চার সচিব ও এক যুগ্ম সচিবের সনদ বাতিলের নথিতে গতকাল রোববার সই করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গত রাতে তিনি জানান, সাময়িক সনদ ও গেজেট বাতিলের চিঠিও প্রস্তুত রয়েছে। আজ সকালে এ চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জামুকার বৈঠকে সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক সপ্তাহ পার হলেও পাঁচ সচিবের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত শনিবার বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিবিসি সংলাপে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এঁদের চাকরিচ্যুত করা উচিত। দুদক এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আশা করি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’
মন্ত্রণালয় তো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের সনদ বাতিল না করে স্থগিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণকারী স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর জামুকার এক বৈঠকে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনীর চার হাজার ৪৪৫ জনের তালিকা অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৩৬৭ জনের নাম জেলা ভাগ করে গেজেটভুক্ত করা হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আলাদা আলাদা আবেদন না করে একসঙ্গে এত মুক্তিযোদ্ধার নাম অনুমোদন করা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ জন্য এ তালিকা বাতিল করা হয়েছে। ওএসডি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব তাঁর নাম যুক্ত করতেই তড়িঘড়ি করে এ তালিকা অনুমোদন দিয়েছেন। এখন প্রত্যেককে জামুকা আইন অনুযায়ী আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে।
জানা গেছে, মমতাজ আলী নামের এক ব্যক্তি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনীর তালিকায় থাকা ২৪ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ এনে রিট আবেদন করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৪ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হন। ওই ২৪ জনের তালিকাও কাল বাতিল করা হয়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ১৮২ জন সরকারি কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের তালিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তালিকা পর্যালোচনা করে অনেক অনিয়ম পাওয়া গেছে। তালিকায় একই নাম বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। একই পরিবারের অনেকের নাম রয়েছে, আবার মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নেই এমন নামও তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গতকাল বলেন, ‘আমরা সঠিক তালিকাই দিয়েছি। কোনো ভুল রয়েছে বলে মনে হয় না। একই পরিবারের সবাই যুদ্ধ করলে অনেকের নাম থাকতেই পারে। তবে তালিকা বাতিলের বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।’