বিএনপির কমিটি ঘোষণা শিগগিরই

Slider রাজনীতি

25415_i5

 

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসছে শিগগিরই। দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দেয়া নেতাদের মতামত ও নানামুখী বিচার-বিবেচনায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপে তিনি নিজেই কমিটি চূড়ান্ত করার বিষয়টি জানিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই সে ঘোষণা আসতে পারে। বিএনপির কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এ বছর পবিত্র হজ পালন করতে যাওয়ার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। তার আগেই তিনি কমিটির  বিষয়টি সম্পন্ন করতে চান। ইতিমধ্যে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপে তিনি নিজেই কমিটি চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছেন। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা একসঙ্গে, না দফায় দফায় দেয়া হবে সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, চেয়ারপারসন কমিটি চূড়ান্ত করার বিষয়টি জানালেও এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। নেতাদের পদায়ন-পদোন্নতি নিয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি। ফলে নেতাদের কাকে কোন পদে দেখা যেতে পারে সেটা পরিষ্কার নয়।
উল্লেখ্য, ১৯শে মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে কাউন্সিলররা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন। কাউন্সিলের এক মাসের মধ্যে তিন দফায় মহাসচিবসহ ৪০টি পদে নেতাদের নামও ঘোষণা করা হয়। ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেয়া হয়েছিল দফায় দফায় কমিটি ঘোষণার নীতি। কিন্তু ঘোষিত পদে কয়েকজন নেতার পদোন্নতি নিয়ে দলে নীরব ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়। পদ নিশ্চিত না হওয়া কিছু সিনিয়র নেতাও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলীয় মহলে। দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ কমাতে ‘ধীরে চলো নীতি’ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে কমিটি গঠনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্ব করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে কর্মসূচি ভিত্তিক আন্দোলনে নেই বিএনপি। জঙ্গিবাদ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের তৎপরতাকেই দেয়া হচ্ছে প্রাধান্য। কিন্তু জাতীয় ঐক্য তৎপরতাকে সফল করতে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যাপারেও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতা এবং শুভাকাঙক্ষী মহল। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নেতারা আগ বাড়িয়ে কারও ব্যাপারে মতামত দিলে সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন তিনি। কিন্তু নিজে থেকে কোনো মন্তব্য করেননি। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা কিছুটা মনোক্ষুণ্ন্ন হলেও কোন্দল ও জটিলতা এড়াতে গোপনীয়তার সঙ্গে কমিটি চূড়ান্ত করেছেন খালেদা জিয়া। পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রতিটি স্তরেই পদের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতসহ শুভাকাঙক্ষীদের মূল্যায়ন নিয়েছেন তিনি বিকল্পভাবে।
এদিকে কাউন্সিলের দীর্ঘদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আলোচনায় নতুন করে তৎপরতা বেড়েছে নেতাদের। পদপ্রত্যাশীরা ছোটাছুটি করছেন সিনিয়র নেতাদের বাসায় বাসায়। চালাচ্ছেন শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবির। মাঝারি সারির নেতাদের লবিং-তদবিরের মধ্যে নিজেদের পদ-পদবি নিয়ে সিনিয়র নেতারাও ভুগছেন অস্থিরতায়। তবে এ অনিশ্চয়তার মধ্যে দলের নারী নেত্রীদের জন্য কিছু সুখবর উঠে এসেছে সিনিয়র নেতাদের আলোচনায়। বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন অন্তত ৭-৮ জন নারী নেত্রী। কয়েকজন নারী নেত্রীর পদোন্নতির ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বিবেচনায় নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে দলের সকল স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সেই অনুযায়ী দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৬ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, দলের সকল স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা হবে। প্রকৃতপক্ষে এই দলের নেতৃত্বেও নারী সদস্য সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে এত দ্রুত সময়ে সে সংখ্যা পূরণ সম্ভব নয়। তবে দিনে দিনে এ সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। নেতারা জানান, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে বিদেশি কূটনীতিকদেরও এ ব্যাপারে তাগাদা রয়েছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে নেতাদের চেয়েও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন কয়েকজন নারী নেত্রী। এছাড়া দেশের অর্ধেক নাগরিক নারী হলেও এখন পর্যন্ত রাজনীতিতে সংগঠিত নয় নারীরা। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টিও অনুঘটকের কাজ করছে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে নারীর পদায়নের সিদ্ধান্তে। পদোন্নতির আলোচনায় আসা নারী নেত্রীরা হলেন- মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, সাবেক এমপি হেলেন জেরিন খান, রেহেনা আক্তার রানু, নিলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আক্তার ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। এর মধ্যে শিরিন সুলতানা ও সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে এবং অন্যরা বিভিন্ন সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *