বন আর কৃষিজমি দুটোই কমছে বাংলাদেশে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

f80f3632c9a9bb0cd5f59f20c24dc855-Untitled-4

গত ২৫ বছরে দেশের ৬৫ হাজার হেক্টর বনভূমি কমেছে। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরেই কমেছে ১৩ হাজার হেক্টর। আর ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশের কৃষিজমি কমেছে ১১ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) গত সোমবার বিশ্বের বনাঞ্চল ও কৃষিজমি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
‘স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ফরেস্ট-২০১৬’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে ১৭টি দেশের কৃষিজমি ও বনভূমি দুই-ই কমেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাম শীর্ষে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ধ্বংস হওয়া বনভূমির ৭০ শতাংশই কৃষিজমিতে পরিণত করা হচ্ছে। ফলে বেশির ভাগ দেশে বনভূমি কমা মানে কৃষিজমি বেড়ে যাওয়া। কিন্তু এই ১৭টি দেশে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে।
২০১৫ সালে এফএও বিশ্বের বনভূমি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বন রয়েছে পাকিস্তানে, প্রায় ২ শতাংশ। তার পরেই রয়েছে বাংলাদেশের বনভূমি, ১১ শতাংশ।
তবে বন বিভাগের হিসাবে গত ২০ বছরে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ কমেনি, বরং বেড়েছে। বন বিভাগের ২০০৭ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে বনভূমির পরিমাণ ছিল ১৩ শতাংশের বেশি। আর এখন বলছে, বনভূমির পরিমাণ বেড়ে মোট ভূমির ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় বননীতি-২০১৬-এর খসড়া অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ ভূমিকে বনভূমিতে পরিণত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূমি কম, জনসংখ্যা বেশি। তারপরও আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বন রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন-সহযোগীদেরও সহায়তা নিচ্ছি।’
প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইইউসিএন) হিসাবে পৃথিবীতে যে পরিমাণে কার্বন নিঃসরিত হয়, তার অর্ধেকের বেশি গাছ শুষে নেয়। বিশ্বের বৃষ্টি ও নদী দিয়ে আসা মিষ্টি পানির ৭০ শতাংশই গাছ ধরে রাখে। পৃথিবীর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ এখনো বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশেও এর কাছাকাছি চিত্র দেখা যায়।
এ ব্যাপারে আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনভূমি ধ্বংস হওয়া মানে একই সঙ্গে মিষ্টি পানির উৎস ও
বনজীবীদের জীবিকা ধ্বংস হওয়া। বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহে যে জিনগত সম্পদ রয়েছে, তা-ও বনের মধ্যে বেশি। ফলে আমাদের প্রাকৃতিক বনগুলোকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।’
এফএও ২০১৬-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৩টি দেশে অবশ্য কোনো বনভূমিই নেই। বাকি দেশগুলোর মধ্যে গত ২৫ বছরে ৩৩টি দেশের বনভূমি কমেছে ও কৃষিজমি বেড়েছে। আর ২৯টি দেশের বনভূমি বেড়েছে ও কৃষিজমি কমেছে।
বাংলাদেশের বন ও কৃষিজমি দুটোই কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বনভূমি উজাড় ও দখল এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষিজমি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষিজমিতে বসতভিটা, সড়ক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণকে দায়ী করা হয়েছে।
তবে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী এফএওর ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘গত ৪০ বছরে বঙ্গোপসাগরে পলি পড়ে ১ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর পুরোটাতেই আমরা বন সৃজন করছি।’ বন পর্যবেক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ ১৫ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। এই তথ্য উল্লেখ করে প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, ‘২০৩৫ সালের মধ্যে আমরা ২০ শতাংশ ভূমিকে বনভূমিতে রূপান্তর করতে পারব বলে আশা করছি।’
তবে কৃষিজমি কমে যাওয়ার হিসাব সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ না করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, তাঁদের হিসাবে ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ লাখ হেক্টর কৃষিজমি কমেছে। তারপরও ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন করার কারণে উৎপাদন বাড়ছে।
এফএওর ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের বনভূমি কমে যাওয়ার একটি ধারাবাহিক চিত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর। ২০১৫ সালে তা কমে ১৪ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বনভূমি আছে শ্রীলঙ্কায়। দেশটির ভূখণ্ডের ৩৩ শতাংশই বনভূমি। এরপর যথাক্রমে মিয়ানমারের ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালের ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারতের ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও ভুটানের ১৫ শতাংশ জমিতে বনভূমি রয়েছে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদপ্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ বনভূমি রয়েছে, তাতে গাছের পরিমাণও বেশ কম। বিশ্বে বনভূমিগুলোতে গড়ে প্রতি হেক্টরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ গাছ থাকে। আমাদের বনে আছে ২০০ থেকে ৩০০ গাছ। ফলে বন থাকলেই হবে না, বনে প্রাকৃতিক গাছ ও বন্য প্রাণী থাকতে হবে।’

সৌজন্যে প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *