তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত রাতে সেনাবাহিনীর একটি অংশ প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়িপ এরদোগান সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালায়। সরকারের দাবি তাদের সে চেষ্টা বানচাল করে দেয়া হয়েছে। অভ্যুত্থান চেষ্টার খবরে গণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইরান। এরদোগান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হচ্ছে এমন খবরে সিরিয়ার কোন কোন মহল উল্লাস করতে থাকে। এ নিয়ে অনলাইন আল জাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, শুক্রবার দিবাগত রাতে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনীর একটি অংশ। সঙ্গে সঙ্গে তারা সামরিক শাসন জারি করে। তারা বলে, দেশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। টেলিভিশনে দেয়া তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের সেনাবাহিনী দেশের প্রশাসনিক পুরো কর্তৃত্ব তাদের হাতে নিয়েছে। তারা সাংবিধানিক শৃংখলা, মানবাধিকার, স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও জননিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের মতে, এসব অধিকার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক যেসব চুক্তি রয়েছে তা থাকবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আশা করবো সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। এরপর পরই বিশ্বনেতারা উদ্বেগ জানাতে থাকেন। তারা বিবৃতি দেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তুরস্কের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য। এ বিষয়ে রাশিয়া সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। এরপরই হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, তারা দু’জনেই তুরস্কে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন দিতে আহ্বান জানিয়েছেন সব পক্ষের প্রতি। তারা সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সহিংসতা ও রক্তপাত এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃটেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তুরস্কের ঘটনায় তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি তুরস্কে অবস্থানরত বৃটিশদের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ওয়েবসাইট অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি বৃটিশদের চারদিক দেখেশুনে চলতে ও প্রকাশ্য স্থানে না যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটে বলেছেন, তুরস্ক সঙ্কট নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, সবার আগে স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও তুরস্কের মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে ঐক্য ও দূরদর্শিতা গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কে যেসব রাশিয়ান রয়েছেন তাদেরকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল সিএনএন-তুর্ক’কে বলেছেন, তুরস্ক ল্যাতিন আমেরিকার কোন দেশ নয়। যারা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছেন তাদেরকে আমি ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু আল জাজিরাকে বলেছেন, তুরস্ক একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আমি মনে করি না যে, এই অভ্যুত্থান চেষ্টা সফল হবে। এ সময় তার কণ্ঠ কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন, তুরস্ককে অস্থিতিশীল করার কোন চেষ্টা করা হবে না। আমরা সিরিয়া ও এ অঞ্চলে অনেক সঙ্কটের মোকাবিলা করছি। এখন সময় তুরস্কের মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার। বিভিন্ন শহরের মানুষ এই অভ্যুত্থান চেষ্টা বানচাল করে দেয়ার জন্য রাস্তায়, বিভিন্ন স্কোয়ারে বেরিয়ে এসেছে। তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল পিপলস রিপাবলিকান পার্টির প্রধান কামাল কালিকদারোগলুও এই অভ্যুত্থান চেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এ নিয়ে বেশ কিছু টুইট করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, এর আগেও অনেকগুলো অভ্যুত্থানে দেশ দুর্ভোগে পড়েছিল। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মুখপাত্র এক টুইটে বলেছেন, তুরস্কে গণতান্ত্রিক শৃংখলাকে সম্মান জানাতে হবে। সবাইকে জীবন রক্ষা করতে হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক তুরস্কে সাংবিধানিক শৃংখলায় দ্রুত ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো তুরস্ক। সেখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ও আইনের শাসনকে পূর্ণ সমর্থন দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেøাভাকিয়া বলেছে, তারা এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরোসøাভ লাজকেক গত রাতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘেরিনি ও ইউরোপীয়ান অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। অভ্যুত্থান চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে কাতার। এ বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তবে অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করেছে একদল মানুষ। এ সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ বেরিয়ে এসে যোগ দেয় তাদের সঙ্গে।