গ্রাম বাংলা ডেস্ক: আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আজীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়ার প্রতিবাদে, সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং তার এই মুহূর্তে মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামীকাল বৃহস্পতিবার ও আগামী রোববার দেশব্যাপী দুইদিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
হরতাল চলবে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত। এছাড়া শুক্রবার দোয়া দিবস এবং শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ দিবস ঘোষণা করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
কর্মসূচিসমূহ গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালনের জন্য দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ছাত্র, শিক্ষক, ধর্মপ্রাণ মুসলমান, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি জামায়াতের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন আলেমে দ্বীন, বিশ্ববরেণ্য মোফাসসিরে কুরআন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অগণিত মানুষের হৃদয়ে তার স্থান। বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দিকাল ধরে তিনি দেশে-বিদেশে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের তাফসির পেশ করে আসছেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তার কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি কুরআনের ময়দানে বিচরণ করেছেন সদা-সর্বদা।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, কাল্পনিক ও বায়বীয় অভিযোগে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে।
সরকার এ মামলায় তাকে ফাঁসানোর জন্য নানান ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।
বেলজিয়াম থেকে পাঠানো জনৈক জিয়াউদ্দীনের পাঠানো চার্জ ফ্রেমিং অর্ডারের উপর ভিত্তি করে চার্জ গঠন করা হয়। ধান চোর, কলা চোর, ট্রলার চোর, যৌতুক আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত ও বিভিন্নভাবে সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করে সরকার। ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির না করে তাদের জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক নজিরবীহিন ঘটনা। সরকারপক্ষের সাক্ষীদের সেইফ হাউসে রেখে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়। আল্লামা সাঈদীর বক্তব্য না শুনেই তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানি অন্যায়ভাবে সমাপ্ত করা হয়। সরকার ইচ্ছা মাফিক সাক্ষী প্রদান করলেও সাঈদী সাহেবের পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা সীমিত করা হয়। দেলু শিকদার নামক কুখ্যাত রাজাকারের অপকর্মের দায় সাঈদী সাহেবের উপর চাপানো হয়। সাঈদী সাহেবের পক্ষের সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ করে ভারতে পাচার করা হয়।
স্কাইপ কেলেংকারির পর সংশ্লিষ্ট বিচারক পদত্যাগ করলেও তার রেকর্ড করা জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদান করা হয়। ১৯৭২ সালে ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলা ও চার্জশিটের সার্টিফাইড কপি আদালতে জমা দেয়ার পরেও তা আমলে নেয়া হয়নি। এভাবে মাওলানা সাঈদীকে প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডারসহ অনেক সাক্ষী এবং ১৯৭১ সালে কথিত ঘটনার সময় সাঈদী সাহেব যশোরে অবস্থান করেছেন মর্মে বেশ কয়েকজন সাক্ষী সন্দেহাতীতভাবে সাক্ষ্য দেয়ার পর মাওলানা সাঈদীকে এক ঘণ্টার সাজা প্রদানেরও যেখানে সুযোগ নেই সেখানে বিগত ৫১ মাস যাবৎ তাকে সরকার অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখেছে।
বন্দি অবস্থায় তিনি হারিয়েছেন মমতাময়ী মাকে, হারিয়েছেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র যাকে কুরআনের মুফাস্সির হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন সেই রাফিক বিন সাঈদীকে। মা ও সন্তান হারানোর বেদনায় যখন তিনি শোকাহত তখন তাকে পরিবার ও আপনজনের কাছে উপস্থিত হয়ে শোক নিবারণের ন্যূনতম সুযোগও দেয়া হয়নি। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিদেশ পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো সত্ত্বেও তাকে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।
বারবার তিনি এ সরকারের চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সরকারের সাজানো মিথ্যা মামলায় আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও তিনি ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়ে চরম জুলুমের শিকার হলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে ন্যায় বিচার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ রায় বহাল থাকলে কোটি কোটি জনতার প্রাণপ্রিয় এ মানুষটিকে জেলের ভিতরেই ইন্তেকাল করতে হবে। একজন নিরপরাধ মানুষের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এটাকে মেনে নেয়া যায় না। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করবেন। আশা করি তিনি সেখানে ন্যায় বিচার পাবেন এবং আবারও কুরআনের ময়দানে ফিরে আসবেন, ইনশাআল্লাহ।
বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতা আল্লামা সাঈদীর উপর সরকারের এ জুলুম কিছুতেই মেনে নেবে না। সরকারের এ জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং তার এ মুহূর্তে মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নি¤েœাক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।
১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হরতাল।
১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সরকারের জুলুম থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশে-বিদেশে আল্লামা সাঈদীর জন্য দোয়া অনুষ্ঠান।
২০ সেপ্টেম্বর শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ।
২১ সেপ্টেম্বর রোববার ভোর ৬টা থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার হরতাল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ অবৈধ সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে দলীয় বাহিনীর দ্বারা সন্ত্রাস সৃষ্টি ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর পরিকল্পিত হামলা এবং উস্কানী দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের সব ধরনের উস্কানী চরম ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা ও সকল ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য জামায়াতের সর্বস্তরের কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্খী ও দেশপ্রেমিক জনতার প্রতি আমরা আহবান জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে অবিলম্বে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপর জুলুম বন্ধ করে এ মুহূর্তে মুক্তি দাবি করা হয়।