আমি হেড অব গভর্নমেন্ট। তথ্য ছাড়া কথা বলি না

Slider জাতীয় টপ নিউজ সম্পাদকীয় সারাদেশ

125837_321

 

 

দুটি রাজনৈতিক দলের মদদে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গুপ্তহত্যা চলছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট, আমি তথ্য ছাড়া কথা বলি না। সব তথ্য হয়তো তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু আমি অমূলক কথা বলি না।’

সাম্প্রতিক বিদেশ সফর নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

এর আগে সৌদি আরব, জাপান ও বুলগেরিয়া সফর করেছেন তিনি। এই সফরে দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সাথে বৈঠকের বিষয়বস্তুর পাশাপাশি সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা, বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ নানা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ উঠে আসে এই সংবাদ সম্মেলনে।

সাম্প্রতিক সময়ে টার্গেট কিলিং সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি চায় না, যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে তারাই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। গুপ্ত হত্যার বিষয়ে আপনারা নিজেরা চিন্তা করে দেখেন, কারা টার্গেট কিলিং করছে। কারা বলে-গুলি কর, বৃষ্টির মতো গুলি কর, মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’।

বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় নাশকতার বিষয়ে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করলে তারা মানুষের রুদ্ররোষের স্বীকার হয়। এজন্য তারা এখন গুপ্তহত্যায় নেমেছে। তারা এমন মানুষকে হত্যা করছে যাতে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। তবে এসব করে পার পাওয়া যাবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের বিচার হবে।’

কোনো ঘটনা ঘটলে বিরোধী দলের প্রতি দোষারোপ করলে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যায় কি-না, এমন এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই ধরনের চিন্তা করছে, পার পেয়ে যাওয়া জঙ্গিরা কারা তাদের পরিচয় যদি কেউ জেনে থাকেন তাদের বিষয়ে আমাদের অবহিত করুন। সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের ধরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তুলে দিন।’

এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের দিকে আঙুল তুলে শেখ হাসিনা আবারো বলেন, ‘ভেবে দেখুন কারা একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। কারা স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীদের গাড়িতে পাতাকা তুলে দিয়েছে, কারা ’৭৫-এর খুনীদের পুনবার্সিত করেছে, কারা একুশে আগস্ট বোমা হামলা করেছে, কারা টুঙ্গিপাড়ায় বোমা হামলা করেছে। এসব ঘটনায় জড়িত সবাই বিএনপি-জামায়াতের লোক।’

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে জয় কি অপরাধ করেছে? তাকে অপহরণ করার জন্য কত টাকা ব্যয় করেছে, এটা তো আপনারা জানেন। এর সাথে কারা জড়িত। সবই তো আপনারা জানেন। কয়দিন আগে লালগোলাপ খ্যাত বিখ্যাত সাংবাদিককে এই কারণে গ্রেফতার হলেন। তিনি কোন দলের লোক? অথচ এই কারণে আপনারা অনেকেই ভেঙে পড়েছেন। গ্রেফতারের বিরোধিতা করেছেন। এখন আবার গুপ্ত হত্যা চলছে। এ পর্যন্ত যারাই এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং ধরা পড়েছে তারা এ দুটো রাজনৈতিক দলের সাথে আছে।’

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা নতুন নয়: প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা প্রসঙ্গ। এবারের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সহিংস ও প্রাণঘাতি-গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সহিংস নির্বাচন-এটা আমি মানি না। কারণ, নির্বাচনে সহিংসতা নতুন নয়। অতীতকাল থেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংঘর্ষ হয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং এর আগের নির্বাচনগুলো কোনোভাবেই এবারের চেয়ে কম সহিংস ছিল না’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। ৮৬ সালের নির্বাচনে একই অবস্থা ছিল। ’৯৬ সালের কথা কি আপনারা ভুলে গেছেন? ২০০১ সালেও একই ঘটনা ঘটেছে। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে কত মানুষ মারা যায়। বরং আমরা অনেক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছি। এখন সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে। তারাই সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে হ্যাঁ, যেসব ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আগামী নির্বাচনে যেন এসব ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা দৃষ্টি রাখবো।’

এ সময় শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি আমলে বেশ কিছু নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তারা এবার বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা খবর নিয়ে দেখেছি, বেশ কিছু জায়গায় তারা গন্ডগোল ঘটিয়েছে।’

দলীয়ভাবে নির্বাচন করায় এবার বেশী সহিংসতা হয়েছে এ মতের বিরোধীতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্থানীয় সরকারকে আরো বশেী মক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক করতেই দলীয়ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত করি। তবে প্রথমবার কিছু করতে গেলে একটু সমস্যা হয়, ভবিষ্যতে তা কেটে যাবে।’

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সাথে দলের বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ বেশি হয়েছে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, বেশিরভাগ সংঘর্ষ হয়েছে ইউপি সদস্য প্রার্থীদের সাথে। সেখানো তো আমাদের কোনো মনোনয়ন ছিল না। তবুও বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন নয়: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে কীনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্বাসী নই। পাকিস্তানের সাথে ক’টনৈতিক সম্পর্ক আছে এবং থাকবে। আর পাকিস্তান যা বলছে, তাদেরকে আরো বলতে দেন। তাদের বলার মাধ্যমে প্রমাণ হয়না যে, বিএনপি-জামায়াত তাদের এজেন্ট এবং দোসর ছিল?

তিন দেশ সফর প্রসঙ্গ: এর আগে লিখিত বক্তব্যে বুলগেরিয়া, জাপান ও সৌদি আরব সফরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাথে এই তিনটি দেশের সম্পর্ক আগের চেয়ে আরো ভালো হবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে আগ্রহী তিনটি দেশই।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমবারের মতো সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ঈদুল আজহার পর তাদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে। আমরা জমি দেবো, তারা বিনিয়োগ করবেন। আর এতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে আমরা ভাবতাম সৌদি আরবে কেবল শ্রমিক পাঠাবো। কিন্তু এখন থেকে আমারা দক্ষ শ্রমশক্তি পাঠাবো, যারা যাবে তাদের কর্মনিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সেটিও তারা নিরাপত্তা দেবে। বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিকদের সাথে তার পরিবারের সদস্যরাও যেতে পারবে। সেই সুযোগটিও আমরা নিশ্চিত করে এসেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্তের নামে যে রক্তপাত চলছে তা বন্ধে সৌদী সরকার নিয়েছে আমরা সেখানে নীতিগতভাবে সাড়া দিয়েছি। সৌদি আরব সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলেছি এই দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় সহায়তা করবে। সৌদি সামরিক জোটে সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। ইতোমধ্যে ৪০টি দেশ তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের সেনা প্রধানও সে দেশ ঘুরে এসেছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *