জাতির জন্ম ইতিহাস সব সময় সত্য ও তথ্যনির্ভর হওয়া উচিত

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

a43546bf64038d0b51cfccf7117315d9-22

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: একটি জাতির জন্ম ইতিহাস সব সময় সত্য ও তথ্যনির্ভর হওয়া উচিত। অতীতে ব্যক্তিস্বার্থকে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে গিয়ে জাতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো ভণ্ডামি ও অতিরঞ্জিতকরণ করা উচিত না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকারের (বীর উত্তম) ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এই কথা বলেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথমা প্রকাশন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইটির মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধানত এ কারণে যে, লেখক মুক্তিযুদ্ধে সামরিক নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা ও পূর্বাপর অনুভূতির কথা অকপটে বলেছেন। আর স্বভাবতই অকপট হলে কিছু না কিছু বিতর্ক ওঠে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘গ্রন্থকারের প্রধান বক্তব্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রস্তুতি ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তব্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি (লেখক) মূলত এ কথাটিই বলার চেষ্টা করেছেন যে বঙ্গবন্ধু যে সমস্ত কথা স্বাধীনতার পক্ষে বলেছেন, সে সমস্ত কথা বাস্তবে পরিণত করার মতো প্রস্তুতি রাজনৈতিক নেতাদের ছিল না। ওই বক্তৃতা সম্পর্কে তাঁর যে ব্যাখ্যা তা আর দশজনের থেকে কিছুটা আলাদা।

বইয়ের লেখক এ কে খন্দকার বলেন, সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রতিযোগিতা এখনো চলছে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকৃত ঘটনা লেখার চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, যে জাতি সত্যকে লালন করতে পারে না, প্রকৃত ইতিহাসকে যারা বিকৃত করে, সেখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধে নিজের দেখা সত্য ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে এ কে খন্দাকর বলেন, অনেকগুলো বিষয়ে কারও মনে রেখাপাত করতে পারে। কতগুলো বিষয় ভালো না-ও লাগতে পারে। কিন্তু সত্য প্রকাশে হতে হবে অনড়। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো রকম ভণ্ডামি, অতিরঞ্জিতকরণ বা প্রকৃত ঘটনার বিকৃতি কখনো ক্ষমার যোগ্য হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বারে বারে হোঁচট খেয়েছে। তবে এ কে খন্দকারের বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটে উঠেছে ও কৌশলাদী বেরিয়ে এসেছে। সব দিক দিয়েই গ্রন্থটি ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, এই বইয়ের কিছু অংশ বির্তকের জন্ম দিতে পারে। তবে ভিন্নমত থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় যে দুর্বলতা ছিল এই বইটি সে অসম্পূর্ণতা দূর করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ কে খন্দকার ইতিহাসবিদ নন। কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন অংশগ্রহণকারী, যুদ্ধের সামরিক নেতা এবং অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর এই বই সে কারণেই ইতিহাসের অন্যতম আকর গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যাঁরা বুঝতে চান, যাঁরা বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে চান, তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যই পাঠ্য বলেই মনে হয়েছে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়কারী জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ, প্রকাশনা ব্যক্তিত্ব মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ, মূলধারা ’৭১-এর লেখক মঈদুল হাসান, লেখক সালেহ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনোয়ার উল আলম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *