শিক্ষকের ভাষ্য চড় মেরে সাংসদ বলেন, ‘শালা কান ধর’       

Slider টপ নিউজ

shamal_kanti_samakal_212843_213219

 

 

স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠবস করেছেন বলে সাংসদ সেলিম ওসমানের বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। তিনি জানান, সেদিন সেলিম ওসমান তাঁর দুই গালে দুটি করে চারটি চড় মারেন। এরপর বলেন, ‘শালা কান ধর।’ ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি জানিয়ে শিক্ষক বলেন, সেদিনের পুরো ঘটনাই সাজানো।

আজ বৃহস্পতিবার খানপুর শহরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

সেদিন শিক্ষক স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠবস করেছেন বলে সাংসদ সেলিম ওসমান আজ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে শিক্ষক বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। পুরো ব্যাপারটিই ছিল সাজানো। মসজিদের মাইকে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছিল। সভার কথা শুনে তিনি স্কুলে যান। কিন্তু গিয়ে দেখেন পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে পেটায়। বিকেলে সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে আসেন। আমার শরীর তখন একেবারেই দুর্বল। যে ঘরে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল, সাংসদ সেখানে ঢুকে কোনো কথা না বলে দুটি করে চারটি চড় মারেন। লজ্জায় তখন আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিল। এরপর ঘর থেকে বের করে সাংসদ লোকজনের সামনে এনে আমাকে বলেন, “শালা কান ধর। ১০ বার ওঠবস কর।” জীবন বাঁচাতে তা করতে বাধ্য হই।’

কেন এ রকম ঘটনা ঘটল—জানতে চাইলে শিক্ষক বলেন, ‘আমি স্কুলটি দাঁড় করিয়েছি। কিছু লোকজন চাচ্ছিলেন আমি যেন স্কুলে না থাকতে পারি। তাঁরাই ষড়যন্ত্র করেন।’

ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে শিক্ষক বলেন, ‘আমি কোনো কটূক্তি করিনি। পুরোটাই সাজানো। স্কুল থেকে বের করতেই এসব ষড়যন্ত্র হয়েছে।’

শিক্ষককে সাংসদ সেলিম ওসমান ‘তারছেড়া’ বলেছেন। জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির ব্যাপারে সাংসদের কাছে প্রমাণ আছে। শিক্ষকের পরিবার লিখিত দিয়েছে। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেন, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে আছেন। তাঁকে ডাক দেন। এগুলো ভিত্তিহীন কথা।’

শিক্ষক বলেন, যে সাংসদ শিক্ষকের গায়ে হাত তোলেন, তাঁকে যেন বরখাস্ত করা হয়।

সরকারের তদন্ত কমিটি শিক্ষককে স্বপদে বহাল করেছে। শিক্ষক এ জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সবাইকে শত কোটি প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানান।

শিক্ষার্থীকে মারধর ও ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির’ অভিযোগে গত শুক্রবার শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় সাংসদের উপস্থিতিতে মারধর ও কান ধরে ওঠবস করানো হয়। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। আজ বেলা ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি সরকারি তদন্ত কমিটি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অন্যায়ভাবে শ্যামল কান্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। তাই ওই কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আর শ্যামল কান্তিকে তাঁর স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *