সাংসদ সেলিম ওসমান নিজেই তার কান ধরলেন!

Slider টপ নিউজ বাংলার মুখোমুখি বাধ ভাঙ্গা মত বিচিত্র রাজনীতি শিক্ষা সম্পাদকীয়

images (1)

 

মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকারগুলোর সুরক্ষা করবে সরকারের নির্দেশনা মানে আইন ‍অনুসারে। সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান অনুসারে আইন প্রনেতারা শপথ গ্রহন করেন আর প্রজাতন্ত্রের সাংবিধানিক পদের লোকজন শপথ নেন। প্রজাতন্ত্রের বাকী কর্মচারীরা সংবিধান ও আইন অনুসারে চলবেন। যদি কেউ বেঘাত ঘটান  তবে তিনি অপরাধী হয়ে যাবেন। আর তখনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ গুলো বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের কথা। আমরা জানলেও সকলকে মনে করিয়ে দেয়া হল বিনয়ের সঙ্গে।

আমাদের সংবিধান ও আইন লংঘন করার অভিযোগে একাধিক মন্ত্রী ও সাংসদের বিচার হয়েছে। ১৯৭১ সালের মে মাসে শিক্ষককে কান ধরে অপমান করার অপরাধে মৃত্যুদন্ডের সঙ্গে ১০ বছরের সাজা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের। ইতিমধ্যে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে যা কার্যকর।

অতি সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী ও  সাংসদ লতিফ সিদ্দিকীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির দায়িত্ব থেকে বিদায় দেয়া হয়েছে। তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে শুধুই একজন নাগরিক এবং অসংখ্য মামলার আসামী।

চলমান ইউপি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে  সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হত্যার অভিযোগে বর্তমানে সাংসদের বিরুদ্ধে হুলিয়াও জারী হল।

তথ্য প্রমান বলছে, বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, অপরাধ করার অভিযোগে তার উপস্থিতিতে পুলিশ দিয়ে একজন নাগরিককে কান ধরিয়েছেন। পরে অবশ্য মন্ত্রী বিষয়টি দু:খ প্রকাশের মত করে এড়িয়ে যান।

নারায়নগঞ্জে সাংসদ সেলিম ওসমান নিজে উপস্থিত থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ বস করিয়েছেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে সাংসদ ও প্রধান শিক্ষককে আলোচিত এই দন্ড দেন তিনি। পরবর্তি সময় ঘটনার অভিযোগকারী ছাত্র ও তার পরিবার বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মত কোন ঘটনা প্রধান শিক্ষক করেননি। এরপরও শিক্ষামন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটি প্রধান শিক্ষকে অভিযুক্ত করে চাকুরী হতে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

তাহলে প্রশ্ন এসে যায়, কোন অভিযোগে কার নির্দেশনায় মাইকিং করে জনতা জোগার করে বিচারের নামে সাংসদ সেলিম ওসমান এই ঘটনাটি ঘটালেন? একজন সাংসদ কি বিচার করতে পারেন কি না, সেলিম ওসমানের জানা আছে কি না, জানিনা। তিনি সাংসদ, তার কি কাজ, কি ক্ষমতা, এটাও তার জানা বা মনে থাকার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ সাংসদ সেলিম ওসমান এমন কাজ করলেন যে ওই কাজের পর সারাদেশের মানুষ দলে দলে কান ধরে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। আর শিক্ষামন্ত্রী এমন তদন্ত কমিটি করলেন যে, নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক আবার নির্যাতিত হলেন মানে চাকুরী হারালেন।

বিশ্লেষকদের মতে, সাংসদ সেলিম ওসমান আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অন্যায়ভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন শিক্ষক ও একজন নাগরিককে জনসমক্ষে এমন ন্যাক্কার জনক ভাবে অপমান করলেন যে, তাৎক্ষনিক ভাবে জাতিকে নিজের কান ধরে রাস্তায় দাঁড়াতে বাধ্য করলেন। একই সঙ্গে জাতির বিবেক একজন শিক্ষককে মানষিকভাবে বিপদে ফেলে তাকে হত্যার চেষ্টা করে জাতিকে কলঙ্কিত করলেন। আর জাতি প্রতিকার চাইতে গিয়ে কান ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লেন। যা বর্তমানে দেশে বিদেশে নিন্দার ঝড় তুলেছে, দেশকে অপমানিত করেছে,মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করেছে। এই ঘটনায় কে কে কান ধরেছেন আর কে কে কান ধরেন নি তা নয় জাতি কান ধরতে বাধ্য হয়েছে এটা সঠিক যার অংশ সাংসদ সেলিম ওসমানও বটে।

এই ঘটনা আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ থেকে ৪৭ পর্যন্ত লংঘন হয়েছে। প্রধান শিক্ষক একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় অনুচ্ছেদ ২৭ এর চরম লংঘনও হল।

images

 

 

জাতির আহবান থাকবে, রাষ্ট্রের মালিক জনগন। রাজনীতির ঘেঁরাকলে পড়ে জনগন ভোটাধিকার হারাচ্ছেন বলেই সেলিম ওসমানের মত লোক সাংসদ হয়েছেন। রাষ্ট্রের মালিকের ভোটাধিকার কেঁড়ে নিয়ে আইন প্রনেতা ও জনপ্রতিনিধি নাগরিককে জনসমক্ষে অপদস্থ করবেন, মহান স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভূলুন্ঠিত করবেন যার ফলে সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিককে কান ধরে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে আমাদের এমন পর্যায়ে পরার মনে হয় এখনো সময় হয়নি। তাই সরকারের উচিত এই বিষয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহন করা যে, ভবিষৎতে এই ধরণের কান ধরানো প্রথা যেন চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *