গণতন্ত্র-মানবাধিকার পরিস্থিতি জানতে চাইলেন সারাহ

Slider রাজনীতি সারাবিশ্ব

7969_f4

 

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন? জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ড. সারাহ সুয়ল। বিরোধী জোট ও দলগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ৫ই জানুয়ারির বহুল আলোচিত নির্বাচনের পর এখানে ভিন্ন মতের গণতন্ত্র চর্চার স্থান, সুযোগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল তার। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সফরের শেষ দিনে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের ভোজ-বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন ওবামা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি সারাহ সুয়ল। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করেন তিনি। বাংলাদেশ পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন তিনি। এখানে ৩ দিনে সরকার, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে সিরিজ মতবিনিময় হয়েছে তার। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক আলোচনা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে তার সর্বশেষ বৈঠক ছিল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে মার্কিন প্রতিনিধিদের সব জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন প্রতিমন্ত্রী। এ নিয়ে সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন তিনি। গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ২০১৪ সালের (৫ই জানুয়ারি) জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ সকল রাজনৈতিক দল স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে নির্বাচনসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশে ৩০টির বেশি টিভি চ্যানেল এবং ১,০০০ এর বেশি পত্রপত্রিকা যেভাবে মতপ্রকাশ করে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিশেষ করে তরুণ সমপ্রদায় তাদের যে সংগঠিত মতামত তুলে ধরে- সরকার সেগুলো নজরে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বৃহত্তর শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে এর অপব্যবহারও সরকারের নজরে রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডার সেক্রেটারি ড. সারাহ সুয়ল ছাড়াও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এ্যালান বার্সিনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ-বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দু’দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ও শক্তিশালী উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলমান প্রক্রিয়ার অধীনে ইতিমধ্যে ৪র্থ পার্টনারশিপ ডায়ালগ, ৪র্থ নিরাপত্তা ডায়ালগ ও ৪র্থ মিলিটারি টু মিলিটারি ডায়ালগ এবং দ্বিতীয় টিকফা ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্যান ক্ষেত্রে দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিতকরণে, সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণে, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র ও সুশাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ জ্বালানি ইত্যাদি বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করছে দু’দেশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রতিমন্ত্রী। এ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমনে কাজ করছে। ড. সারাহ সুয়ল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কমিউনিটি পুলিশিং এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমামদের সাহায্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগকে ‘খুবই চমৎকার’ বলে উল্লেখ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছরের ১৫ই জানুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সিট্রিমিজম বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্ল্যান অব অ্যাকশন টু ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম উপস্থাপন করেন। নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ড. সারাহ উক্ত প্ল্যান অব অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সহযোগিতার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন যেহেতু জাতিসংঘের সকল কার্যক্রমেই বাংলাদেশের সমর্থন থাকে এক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হবে না। অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এ্যালান বার্সিন বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় গৃহীত ত্বরিত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *