বিএনপির অনেক প্রত্যাশার জাতীয় কাউন্সিল আজ

Slider টপ নিউজ রাজনীতি
51f0daf5eb97e-bnp_logo
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির অনেক প্রত্যাশার জাতীয় কাউন্সিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, নানা প্রতিকূলতার মুখে এবারও ঘুরে দাঁড়াবার সংকল্প ব্যক্ত হবে এই কাউন্সিলে। জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিএনপির এবারের স্লোগান ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশনে সকাল ১০টায় কাউন্সিল উদ্বোধন করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলে দলের মহাসচিবসহ আংশিক কমিটি ঘোষণা দিতে পারেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি ‘কাটবে আঁধার, আসবে আলো’ শিরোনামের উদ্বোধনী বক্তব্যে হতাশা ঝেড়ে ফেলে ‘নবচেতনায় জেগে ওঠার’ আহ্বান জানাবেন নেতাকর্মীদের। কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন তিন হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর ছাড়াও প্রায় ৩০ হাজার ডেলিগেট। উপস্থিত থাকছেন দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। কাউন্সিলকে ঘিরে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। অনেক দিন পর প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসছেন মামলা-হামলার ভয়ে আত্মগোপন ও নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা। তিন বছর পর কাউন্সিল হওয়ার বিধান থাকলেও দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠেয় এ কাউন্সিলের মাধ্যমে সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে আজ ঘটবে এক মিলনমেলা। কাউন্সিল সুচারুরূপে সম্পন্ন

করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় বিএনপির মুখপাত্র সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি বর্তমানে পার করছে কঠিন দুঃসময়। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে মামলা-হামলা আর বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পর্যুদস্ত অবস্থায় থাকা নেতাকর্মীরা নতুন শপথ নিতে চান এই কাউন্সিলের মাধ্যমে। আবার ‘জেগে ওঠার প্রত্যয়’ নিয়ে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করা হবে বিএনপিকে। অবশ্য ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও তাতে ব্যর্থ হয় দলটি।

দলে থাকা অভিজ্ঞ প্রবীণদের সঙ্গে সত্যিকার ত্যাগী, সাহসী ও তারুণ্যদীপ্ত নেতাদের সমন্বয় ঘটিয়ে দলটির নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠিত হবে বলেই প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাউন্সিলরদের কাছে মতামত চাইবেন। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত জানাবেন। বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি উপকমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়। গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি ১৭টি উপকমিটির প্রস্তাব দিলেও তা বাড়ানোর পক্ষেও মত দিয়েছে। সব মিলিয়ে বড় আকারের কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই বৈঠকে।

অবশ্য সূত্র জানিয়েছে, আজই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। কাউন্সিলরদের অর্পিত দায়িত্বের আলোকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েকদিন পরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিতে পারেন। অতীতের মতো এবারও নির্বাচন ছাড়াই নেতারা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। দলের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা চেয়ারপারসনের ওপর। তার পরও নেতৃত্ব নির্বাচনকে ‘গণতান্ত্রিক দেখাতে’ কাউন্সিলররা দলের চেয়ারপারসনকে মহাসচিবসহ অন্যান্য পদে নির্বাচনের ক্ষমতা অর্পণ করবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসনের মূল্যায়নের ভিত্তিতে জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা নির্বাচিত হবেন।

ইতিমধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থবারের মতো চেয়ারপারসন এবং তারেক রহমান দ্বিতীয়বারের মতো সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এখন অন্যান্য শীর্ষ পদে কে আসছেন_ তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। অবশ্য আরেকটি অংশ শেষ মুহূর্তে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম অথবা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মহাসচিব করতে জোর তদবির-লবিং চালিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের ঘোষণা শুনতে আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন দলের নেতাকর্মীরা।

দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সুনির্দিষ্ট ‘বিশেষ সাংগঠনিক দায়িত্ব’ দেওয়ার বিষয়ে দলের মধ্যে বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কিছুটা মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে এক-এগারো থেকে শুরু হওয়া সংস্কারপন্থি ইস্যুটি আপাতত চাপা পড়তে পারে আজকের কাউন্সিলের মাধ্যমে। বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে সতর্ক থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ভেন্যুর অনুমতি পাওয়ার বিলম্বজনিত কারণে কাউন্সিলে এবার বিদেশি অতিথির সংখ্যা কম থাকতে পারে বলে আগে থেকেই জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। যুক্তরাজ্যের স্বতন্ত্র সাংসদ সাইমন ড্যানজাক ঢাকায় পেঁৗছেছেন। গতকাল রাতে ঢাকায় পেঁৗছার কথা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সাংসদ ফিলিপ বেনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর রাজনীতিবিদ ও জিয়াউর রহমানের নামে সড়কের নামকরণের অন্যতম উদ্যোক্তা অল্ডারম্যান জোয়েজন মুর, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেত্রী মিস বারবারা মুর প্রমুখের। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেছেন, কাউন্সিলের পর বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন কমিটির নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কাউন্সিল ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, নেতাকর্মীদের ব্যাপক প্রত্যাশা আছে, এ কাউন্সিলেই নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসবে।

‘কাটবে আঁধার, আসবে আলো’ :কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্বোধনী অধিবেশনের বক্তব্যে বেশ নতুন চমক থাকবে। ‘কাটবে আঁধার, আসবে আলো’ শিরোনামের বক্তব্যে বর্তমানকে মাথায় রেখে, ভবিষ্যতে চোখ রেখে অতীত-বর্তমানের বিশ্লেষণের পাশাপাশি থাকবে ভবিষ্যৎ নির্দেশনা। বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করবেন দলের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মনোভাব ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির অবস্থান। সূত্র জানিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবদানের পাশাপাশি এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানও স্বীকার করে বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলের উদ্বোধনী বক্তব্যের এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বলে উল্লেখ করতে পারেন বিএনপিপ্রধান। বক্তব্যে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নতুন রূপে সজ্জিত বিএনপি ভূমিকা পালন করবে বলে আশ্বস্ত করবেন খালেদা জিয়া। সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে অতীত-আশ্রয়ী বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে ভবিষ্যতের রূপরেখা বেশি করে তুলে ধরবেন বিএনপিপ্রধান।

জমজমাট সাজে কাউন্সিল ভেন্যু, প্রস্তুতি সম্পন্ন :ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিলের যাবতীয় প্রস্তুতি গতকাল সম্পন্ন করেছে বিএনপি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল মঞ্চের সামনে বিদেশি অতিথিসহ ভিআইপিদের জন্য ২৬০টি আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে রাখা হয়েছে ৬০ জনের বসার মতো সোফাও। বিভিন্ন প্রান্তে বড় পর্দার প্রায় ৩০টি প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম থাকছে। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় ভেন্যুর প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে লাগানো হয়েছে পোস্টার আর ব্যানার। ছাপানো হয়েছে কাউন্সিল স্মরণিকা। কাউন্সিল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতিমধ্যে দলের তিন হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর ও ৩০ হাজার ডেলিগেট ঢাকায় পেঁৗছেছেন। কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকদেরও কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দলটি। কাউন্সিলে তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি কাউন্সিলে যাবেন না বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কাউন্সিলের স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন জোরদার করা হবে। পুরানা পল্টনে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের কার্যালয়ে কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত প্রকাশনা উপকমিটি এ অনুষ্ঠান করে। এর আগে সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই কাউন্সিল ইতিহাসে স্থান পাবে। এর মাধ্যমে বিএনপি জেগে উঠবে। কাউন্সিলের পর আন্দোলন জোরদার হবে। এদিকে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর কাউন্সিল হওয়ায় গত কয়েকদিনে সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিদের (ডেলিগেট) তীব্র ভিড় দেখা গেছে দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে।

কাউন্সিলের বিভিন্ন পর্ব :সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে উপস্থিত হবেন। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাংগঠনিক রিপোর্টও পেশ করবেন। তার পরই তার লিখিত বক্তব্য। এর পরই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাউন্সিলে বক্তব্য রাখবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অতঃপর প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের বক্তব্যের মাধ্যমে কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটবে।

দুপুর ২টায় শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের রুদ্ধদ্বার অধিবেশন। কাউন্সিলররা আসন গ্রহণ করে এ রুদ্ধদ্বার অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বিভিন্ন কক্ষে একাধিক প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে কাউন্সিলররা কার্যক্রমে অংশ নেবেন। এ অধিবেশনে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুমোদন হবে। এরপর খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখবেন। পরে মহাসচিবসহ আংশিক কমিটি ঘোষণা হতে পারে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় অধিবেশনে স্থ্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাজাহান ও রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখবেন। এ ছাড়া ১০ জন কাউন্সিলর বক্তব্য রাখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *