ছোটপর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। তার নামেই চলেছে অনেক নাটক। নাটকের পাশাপাশি সিনেমাও কাজ করছেন তিনি। বড়পর্দায় তার যাত্রাটাও ছিলো রাজসিক। অভিনয় করেছিলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সুপারহিট সিনেমা ‘মনপুরা’য়। তারপর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘টেলিভিশন’, গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’। সবগুলো সিনেমাকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। সম্প্রতি কাজ করেছেন অমিতাভ রেজার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’তে। আয়নাবাজি নিয়ে নিজের প্রত্যাশা, বড় পর্দায় নিয়ে পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলামেইলের সঙ্গে কথা বললেন তিনি।
আয়নাবাজি’র পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ এখন কোন পর্যায়ে?
ফাইনাল মিউজিকের কাজ চলছে। সঙ্গে চলছে ফাইনাল এডিটিং। ডাবিংও শেষ। তবে ফাইনাল কারেকশনে যদি কোন ত্রুটি ধরা পরে সেক্ষেত্রে হয়তো আবার কিছু অংশের ডাবিং করা লাগতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মার্চের শেষ সপ্তাহ অথবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ছবিটি মুক্তি পাবে।
সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা?
অনেক কষ্ট করে কাজটা করেছি। ছবিটা দর্শকরা গ্রহণ করবে-এটা আশা রাখি। ছবিটা জনপ্রিয় হবে। হলে গিয়ে দর্শকরা দেখবে। কারণ মেকিংটা সুন্দর হয়েছে। আর অমিভাভের নির্মাণে তার কারিশমা দেখিয়েছে। টোটাল টিম নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। আমি এর আগেও বেশ কটা সিনেমা করেছি। সেগুলো দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। আমার মনে হয়ে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সেগুরলোর চেয়েও হাজাভাগ ভালো করেছি আয়নাবাজিতে।
পাঁচ মাস ধরে একটা জার্নির মধ্যে ছিলেন আপনি। জার্নির আগের চঞ্চল আর এখনকার চঞ্চলের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখছেন কি?
অবশ্যই। ‘আয়নাবাজি’ শুরু করার আগে ছোটপর্দায় প্রচুর কাজ করছিলাম। সত্যি বলতে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। ছোটপর্দায় ডিফ্রেন্ট টাইপের কাজ খুব কম হয়। একই ধরনের কাজ করতে করতে মনোটোনাস লাগছিলো। পরে যখন ‘আয়নাবাজি’র কাজটা শুরু করলাম তখন মনের মধ্যে একটা শান্তি কাজ করলো। ভালো ডিরেক্টর, সিনেমাটোগ্রাফার আর ডিফ্রেন্ট চরিত্রে অভিনয় করলে নিজের অস্তিত্বটা বোঝা যায়।
গত ছয়মাসে উল্লেখ্য করার মতো কোন নাটকে দেখা যায়নি আপনাকে..
কারণ ‘আয়নাবাজি’। টানা পাঁচমাস কাজ করেছি। আয়নাবাজি শেষ হওয়ার পরও নাটকে খুব একটা কাজ করছিনা। নাটকের মান এখন অনেক কমে গেছে। নাটকের বাজেট কমে গেছে। যার ফলে পুরো টিমের উপর প্রেসার পরে। আগে একটা নাটকের শুটিংয়ে দিনে দশটার মতো সিকুয়েন্স করতাম। কিন্তু এখন পনেরটা থেকে বিশটার মতো সিকুয়েন্স করতে হয়। সে কারণেই কাজের কোয়ালিটি কমে গেছে। এছাড়া নাটকে ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব। ভালো রাইটারদের কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট নিলে মোটামুটি সন্মানী দিতে হয়। কিন্তু বাজেট কম বলে সেটাও হচ্ছেনা। পারতপক্ষে নিজের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্যই কিছু নাটকে কাজ করছি। সেটা আয়-রোজগারের বিষয়টাও মাথায় রেখে। অভিনয় ছাড়া তো আমি আর কিছু করিনা। আর পাঁচমাস পর নাটকের কাজে অ্যাডজাস্ট করতে কষ্ট হচ্ছে। আগে তিরিশ দিনই কাজ করতাম। অনেক এনার্জি ছিলো। কিন্তু এখন বয়সও বেড়ে গেছে। তাছাড়া বেবিটা স্কুলে যায়। ওকে সময় দিতে হয়। সেকারণেই গড়পড়তা কাজ করবোনা। বেছে বেছে মনের মতো কিছু কাজ করবো।
ছোটপর্দার দর্শকদের মধ্যে একটা ধারনা গেঁথে গেছে, চঞ্চলের নাটক মানেই হাসির কিছু। সেই ট্রাক থেকে নিজেকে বেরিয়ে আনছেন কিনা?
দর্শকদের মধ্যে কিছু ভুল ব্যাখ্যা আছে। নাটকে মজা বলে কিছু নাই। হাসির নাটক বলে কিছু নেই। মোটা দাগে এটা এন্টারট্রেইন। আমি মানুষকে হাসাতে চাইনি কখনোই। অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করতে চেয়েছি। হাসানো তো অভিনেতার কাজ না। আমি অভিনয় করি স্রেফ ভালো লাগানোর জন্য। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য লোক হাসানো নাটকের ট্রেন্ডটা দেশে চলছে। অনেক ডিরেক্টর মনে করে নাটকে লোক হাসাতে হবে। নচেৎ দর্শকদের ধরে রাখা যাবে না। এটা ভুল।
বড়পর্দায় আপনার পরিকল্পনা কি?
নাটকের ক্ষেত্রে আমি রিয়েলস্টিক কাজ করেছি। কিন্তু সিনেমায় দেখা যাচ্ছে, এক গানে অভিনয়শিল্পীরা তিনবার ড্রেসে চেঞ্জ করে। এটা আসলে ফ্যান্টাসি। বলিউডি সিনেমা থেকে আমাদের কালচারে ঢুকে গেছে। এই ধরনের সিনেমার জন্য আমি মেন্টালি প্রিপেয়ার না। নেচে দর্শকদের বিনোদন দিতে চাইনা। গল্প নির্ভর কাজ করবো। বাস্তবধর্মী কাজ করবো। ভালো সিনেমা করবো।
‘আয়নাবাজি’র পর নেক্সট প্রজেক্ট?
সারা বছরই সিনেমার অফার আসতে থাকে। কিন্তু যে ধরনের কাজ করতে চাই সেটা মিলতে হবে। গত দশ বছরে দুই বছর পরপর একটার মতো কাজ করেছি। আয়নাবাজ’র পরও অনেক অফার এসেছে। কিন্তু নতুন কোন ছবির ব্যাপারে কোন ডিশিসন নেইনি। সিনেমায় নাম লেখানোর আগে ভাবতে হয়, ডিরেক্টর কেমন, গল্প কেমন। সব মিলে গেলে হয়তো শিগগিরই নতুন কোন সিনেমায় কাজ করতে পারি।
বাংলামেইল২৪ডটকম/এসএস/আরএইচ