এসআইকে রক্ষায় ১৩ লাখ টাকার অফার, বাদীর লুকোচুরি

Slider জাতীয়

 

 

2016_02_15_21_56_46_8GEJrYBZ8tX5vKueUfgnL4QhqfrYZc_original

 

 

 

 

 

ঢাকা: মিরপুরের ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলার আসামি এসআই জাহিদকে রক্ষা করতে তার মা নিহতের মাকে ১৩ লাখ টাকায় সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলামেইলের সঙ্গে আলাপকালে সুজনের মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে এসআই জাহিদের মা ফল মিষ্টি নিয়ে তার বাসায় আসেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে চার পাঁচ মাস যাবত ওনারা খুব বেশি যোগাযোগ করেন। এর আগে আইয়া হুমকি ধমকি দিয়া গেছে। কইছে মিলনের লাইগা। আইয়া কইয়া গেছেগা, কইতো ভার্সিটি থেকে আইছি। এরপর দুই তিন মাস বন্ধ ছিল। আমি কইছি কেইস উঠামুনা। আইজকা তিন চার মাস যাবত জাহিদের মা নিজে আইসা এলাকায় যারা নেতা পেতা আছে তাগো ডাইক্যা, তাগো বাড়িতে যাইয়া সে ভাও করছে, ভাও টাও কইরা আমারে ডাকছে, আমি যাইনি। আমি মামলা নিষ্পত্তি করবো না, আমি যাবোনা।’

সাহিদা বেগম জানান, এরপর এসআই জাহিদের মা মিষ্টি-ফল নিয়ে তার বাসায় আসে। ওই সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। পরে বাসায় এলে তার হাতে পায়ে ধরেন। তিনি সুজনের মাকে বলেন, ‘চিরদিন আমার ছেলে আপনাকে দেখবে। আপনার বাচ্ছা-কাচ্ছাকে, নাতিনাতকুর দেখবে। আপনি মামলা উঠায়ে নেন। আপনার ছেলেকে তো আর পাবেন না। আমার ছেলেকে আটকে রেখে লাভ কী? আমার ছেলেকে বের করে দেন। আমার ছেলে আপনাদেরকে দেখবে।’

কিন্তু এতে গলে যাননি ছেলে হারানো সাহিদা বেগম। এসআই জাহিদের মায়ের সব অনুরোধ উপরোধ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘কেন? আমি এই একবছর মামলা চালাইছি। আমার পোলায় একটু পানি খাইতে চাইছে। পানিডাও খাইতে দেয়নো। আপনার পোলায় যে মাইরডি মারছে। চোখডি ফুইল্লা গেছে। রক্ত পড়ছে নাক দিয়া মুখ দিয়া। পিডে বারি, গেডিতে বারি (পিঠে ঘাড়ে আঘাত)। এত্তো সহ্য করছে আমার পোলায়। আর আজকে আপনার পোলায় জেলে, আপনে দেহেন। আমার পোলারে যদি জেলেও ভইরা থুইতো, আমি দেখতাম। বাচ্চা কাচ্চারা দেখতো।’

কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, জাহিদের মা তাকে টাকার অফার দিয়েছেন। জায়গা জমি বিক্রি করে তিনি ওই টাকা দিবেন।

কত টাকার অফার দিয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ১০/১২/১৩ লাখ টাকার কথা বলছে।

এখন আপনি কী ভাবছেন? উত্তরে সাহিদা বলেন, তিনি টাকা না নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিচার চান। ওই হাত দিয়ে এরকম টাকা ধরবেন না।

এদিকে তাকে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে এসআই জাহিদের মা মামলাটির বাদী নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসিকে খুঁজেতে থাকেন। কিন্তু তিনি তার পুত্রবধূকে ওইদিন জাহিদের মায়ের সাথে দেখা করতে দেননি।

সাহিদার দাবি, এরপর জাহিদের মা আদালতে হাজিরা দিতে এলে মামলার বাদী লুসিকে নানা কায়দায় ম্যানেজ করে ফেলে। আসামির মা তার পুত্রবধূকে আাদলতে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে, কানে কানে কথা বলেছে। ম্যানেজ করার এই দৃশ্য নিহতের বড় ভাই দেখেছেন বলে জানিয়েছেন নিহতের মা। তিনি বলেন, বাদী কোথায় যায় না যায়, কী করে না করে সবকিছুই আসামির লোকজন পর্যবেক্ষণ করে।

হঠাৎ করেই গত ৬ জানুয়ারিতে আদালতে হাজির হওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে বাদী মমতাজ সুলতানা লুসি কাউকে কিছু না বলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সুজনের মা বিভিন্নভাবে বউকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবার বাড়িতে বিষয়টি জানান। কিন্তু বাবার বাড়ি থেকে সেভাবে সাড়া না পেয়ে তিনি মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

একমাস ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি লুসি আদালতে হাজির হলে আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে অ্যাডভোকেট সালমা আলী সঙ্গে করে নিয়ে যান। এদিকে নিহতের দুই সন্তান এখনো মায়ের সাথেই থাকছে।

এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিহতের মায়ের বাসায় আসামির মায়ের যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এদিকে মামলাটির প্রধান অভিযুক্ত এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদের জামিন আবেদন নাকচ করে আগামী ১ মার্চ সুজন হত্যা মামলায় সাক্ষ্য এবং জনি হত্যা মামলায় চার্জগঠনের দিন ধার্য করেছেন।

রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা এই আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা দুইটি মামলা তদন্তাধীন থাকায় ওই মামলা দুইটির তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত হেফাজতে নির্যাতন নিবারণ আইনের মামলা দুইটির কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করে আসামিপক্ষ। কিন্তু বিচারক উভয় পক্ষে শুনানি শেষে বলেন, হেফাজতে নির্যাতন নিবারণ আইনের মামলা স্পেশাল আইনের মামলা। এ মামলা স্থগিতের সুযোগ নেই। তাই পুলিশের দায়ের করা মামলায় স্থগিতের আবেদন দেয়ার জন্য তিনি আইনজীবীদের পরামর্শ দেন।

সুজন হত্যা মামলাটির অপর ৪ আসামি হলেন, মিরপুর থানার এএসআই রাজ কুমার, কন্সটেবল আসাদ, কন্সটেবল রাশেদুল ও মিথুন।

গত ১৩ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ২০ জুলাই আদালতে নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি এই মামলা করেন।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর গত ৬ নভেম্বর মামলাটিতে সিএমএম আদালত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *