প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ‘সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী’ আচরণ করছেন বলে আবারও অভিযোগ করেছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া চিঠির বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। সেই চিঠিতেই এসব অভিযোগের কথা এসেছে।
এর আগে অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি পাঠান শামসুদ্দিন চৌধুরী। প্রায় চার মাস আগে অবসরে যান তিনি।
সাবেক এই বিচারপতি বলেন, অবসরে যাওয়ার পর যেসব রায় ও আদেশ তিনি লিখেছেন, তা জমা দিতে চাইলেও প্রধান বিচারপতির ‘নির্দেশনার কারণে’ তা নেওয়া হয়নি।
প্রধান বিচারপতিকে তিনি লিখেছেন, “আমি ইতিপূর্বে আপনাকে অবহিত করেছি যে, আপনার এরূপ আচরণ সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী ও একই সাথে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।”
তিনি লিখেছেন, “আমার প্রিজাইডিং জজ, মাননীয় বিচারপতি জনাব মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়াকে আমার লেখা সমাপ্ত হওয়া রায় ও আদেশগুলো গ্রহণ করার অনুরোধ করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির লিখিত রায় ও আদেশ গ্রহণ করা যাচ্ছে না।”
অবসরের পর ‘বৈষম্যমূলকভাবে’ তার অফিস তালাবন্ধ করে দেওয়ায় এবং অফিসের সব কর্মী ও সুবিধা থেকে তাকে ‘বঞ্চিত’ করায় হাতে লেখা রায়গুলো ‘টাইপ করতে’ পারেননি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থি’। তার ওই বক্তব্য নিয়ে দেশে নানামুখী আলোচনার বিষয়টিও বিচারপতি শামসুদ্দিনের চিঠিতে এসেছে।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী লিখেছেন, “এ বক্তব্যের উপর ইতিমধ্যে মহান সংসদে আলোচনা হয়েছে এবং সংসদ আপনার বক্তব্যের সহিত দ্বিমত পোষণ করেছেন ও বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার পর রায় লিখতে ‘কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই এবং এটা অসাংবিধানিক নয়’ মর্মে মন্তব্য করেছেন।”
প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, অবসরের পর রায় লেখার দীর্ঘদিনের এই চর্চায় তারা কোনো সমস্যা দেখেন না।
আর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনিও ঘোষিত রায় পরে লেখা বেআইনি মনে করেন না।
আইনজ্ঞদের এ মতামতের প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি শামসুদ্দিন প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, “আপনার ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্বাসের জন্য আপনি বিচার ব্যবস্থা আইন ও প্রথাকে অস্বীকার করতে পারেন না। কারণ আপনি সাংবিধানিক শপথ নিয়েছেন।”
নিজের শুনানি করা রায় ও আদেশ লেখার কাজ শেষ করেছেন জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে তিনি সেসব রায় ও আদেশ গ্রহণের ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নিতে বলেছেন।
ওই চিঠির অনুলিপি আইনমন্ত্রী ও আপিল বিভাগের অপর বিচারকদেরও পাঠানো হয়েছে।
২০০১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া শামসুদ্দিন চৌধুরী গতবছর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে অবসরে যান।
অবসরে যাওয়ার সময় ১৫টি রায় ও ৭০টি আদেশ লেখা বাকি ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।