ঢাকা : গ্যাসের মূল্যহার বণ্টনের ক্ষমতা চায় পেট্রোবাংলা। এজন্য জ্বালানি বিভাগের অনুমতি চেয়েছে সংস্থাটি। আইন অনুসারে এ বিষয়টি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আওতাধীন। অর্জিত রাজস্ব (গ্যাস বিক্রির অর্থ) থেকে সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচলন ব্যয় ও লাভ বাবদ কি পরিমাণ অর্থ রাখা হবে এবং কি পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে তা মূল্যহার বণ্টনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো সর্বশেষ আদেশে বিইআরসি মূল্যহার বণ্টন নির্ধারণীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করেনি। এতে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ কমে যাবে। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানিগুলো আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য বিইআরসির কাছে আবেদন করে। কিন্তু কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করছে না।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই মূল্যহার বণ্টন নির্ধারণ ও কার্যকর করতে চায় পেট্রোবাংলা।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমদ।
গত বছরের ২৭ আগস্ট ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে (১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়) বিইআরসি। তবে পূর্ণাঙ্গ আদেশ জারি করে গত ২৭ অক্টোবর। ওই আদেশে পেট্রোবাংলার সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য মূল্যহার বণ্টন বিবরণীও যুক্ত করা হয়। গ্যাসের দাম বাড়ানোর আদেশের সঙ্গে এ ধরনের বিবরণী যুক্ত করার ঘটনা এটিই প্রথম।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘আইন ও প্রবিধাণ অনুসারে গ্যাসের মূল্যহার বণ্টন ও পুনঃনির্ধারণ করার ক্ষমতা কমিশনের।’ মূল্যহার বণ্টন পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর অবেদন তারা পেয়েছেন উল্লেখ করে সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। এই পর্যালোচনার জন্য গণশুনানি দরকার হবে না।’
পেট্রোবাংলার চিঠিতে বলা হয়, ‘পূর্বে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে পেট্রোবাংলা মূল্যহার বণ্টন বিবরণী প্রস্তুত ও কার্যকর করত। এবার বিইআরসি এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে। এ আদেশে বিইআরসি রাজস্ব চাহিদার ভিত্তিতে সঞ্চালন কোম্পানির ট্রান্সমিশন চার্জ সকল শ্রেীণতে আগে নির্ধারিত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে ৩২ পয়সা থেকে কমিয়ে ১৫ দশমিক ৬ পয়সা পুননির্ধারণ করে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ গড়ে প্রতি ঘনমিটারে ৪৯ পয়সা থেকে কমিয়ে ২৩ পয়সা পুননির্ধারণ করে। এভাবে কোম্পানিগুলোর বিতরণ মার্জিন গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এর ফলে কোম্পানিগুলোর করপূর্ব মুনাফা এবং সরকারকে প্রদত্ত করের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পাবে।’
পেট্রোবাংলার অধীনস্ত গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (বিজিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন (জেজিটিডিসিএল), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি (পিজিসিএল), কর্ণফুলী গ্যাস (কেজিডিসিএল), সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি (এসজিসিএল), গ্যাস ট্রন্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল)। এরমধ্যে তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি বিতরণ মার্জিন ও ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার সংক্রান্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য এবং জিটিসিএল তাদের সঞ্চালন চার্জ পুনর্বিববেচনার জন্য বিইআরসিতে আবেদন করেছে।