সাগরে ১১ নম্বর ব্লকে তেল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

11_189074

 

 

 

 

 

বঙ্গোপসাগরে ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাসের বড় মজুদ পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছেন পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ব্লকটি চট্টগ্রাম উপকূল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। ওপারে মিয়ানমার। মিয়ানমার তাদের সীমানায় গ্যাসের মজুদ পেয়েছে। বাংলাদেশ সীমানায়ও তেল-গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পৃথক অনুষ্ঠানে ইঙ্গিত দেন যে, শিগগিরই তেল-গ্যাস খাতে সুখবর আসছে। তবে তারা বিস্তারিত কিছু বলেননি।
সাগরে এ ব্লকে এখন তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে বিদেশি কোম্পানি সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি। কোম্পানির প্রকৌশলীরা এ ব্লকে যৌথভাবে দ্বিমাত্রিক জরিপ করেছেন। এ জরিপের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ ব্লকে তেল-গ্যাসের একটি কাঠামো রয়েছে। তবে সেখানে তেল-গ্যাস আছে কি-না বা কি পরিমাণ আছে_ সেটি কূপ খননের পর পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও তা যদি বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হয়, তাহলে কোনো লাভ হবে না। অনেক সময় মাটির নিচে ছোটখাটো তেল-গ্যাসের কাঠামো পাওয়া যায়। কিন্তু সেখান
.থেকে উত্তোলনযোগ্য যে মজুদ পাওয়া যায়, তা আর্থিকভাবে লাভজনক হয় না। ফলে ওই তেল-গ্যাস তোলা হয় না। তেল-গ্যাস পেলেই হবে না, বড় ক্ষেত্র হতে হবে, যাতে ওই গ্যাস তুলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন, সাগরে তারা বড় তেল-গ্যাসের ক্ষেত্র পাওয়ার আশা করছেন।
গতকাল সোমবার পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সান্তোস ও ক্রিস এনার্জির কর্মকর্তারা ১১ নম্বর ব্লকে ভূতাত্তি্বক জরিপে একটি তেল-গ্যাস কাঠামো পাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলায় সমুদ্রের ওই এলাকায় করা জরিপের প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। পেট্রোবাংলার উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, এখন ত্রিমাত্রিক জরিপ করা হবে। তারপর কূপ খনন করে নিশ্চিত করা হবে খনিজ সম্পদ আছে কী নেই। যদি তেল বা গ্যাস থাকে তবে কূপ খনন করার পরই তার অবস্থান ও মজুদ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত হওয়া যাবে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস আছে কি-না।
সূত্র জানায়, সাগরে মাটির নিচে গভীরে গ্যাস বা তেল থাকতে হলে সেখানে কঠিন শিলার একটি আবরণ থাকতে হয়। এই আবরণের নিচে জমা থাকে খনিজ সম্পদ। এমনকি সেখানে খনিজ পানিও থাকতে পারে। সমুদ্রের নিচে এই আবরণ পাওয়া গেছে। এ তথ্য থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, এখানে তেল-গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। ত্রিমাত্রিক জরিপ করার পর সেখানে কূপ খননের পর এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সাগরের যে ব্লকে গ্যাসের কাঠামো পাওয়া গেছে, তার উল্টো দিকে মিয়ানমারে গ্যাস পাওয়া গেছে। সেখান থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ অংশেও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
সাগরের এসএস ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৪ সালের ১২ মার্চ পেট্রোবাংলার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক কোম্পানি সান্তোস সাঙ্গু ফিল্ড লিমিটেড (এসএসএফএল) ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক ক্রিস এনার্জি এশিয়া লিমিটেডের (কেইএএল) উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে।
পিএসসি অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদি অনুসন্ধান কাজে ৮৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক ভূতাত্তি্বক জরিপ করা হয়। গত বছর দ্বিমাত্রিক জরিপের জন্য ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিজিজিকে নিয়োগ দেয় সান্তোস ও ক্রিস। তারা জাহাজ নিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এসএস-১১ নম্বর ব্লক এলাকায় দ্বিমাত্রিক জরিপ করে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সরাসরি কিছু না জানালেও তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমুদ্রে বড় গ্যাস মজুদ আবিষ্কারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।
সান্তোস আগে থেকে বাংলাদেশে কাজ করলেও ক্রিস এনার্জির এটিই প্রথম। সান্তোস বাংলাদেশের সাগরের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গুতে কাজ করেছে। এর আগে মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে দ্বিমাত্রিক জরিপ করে। সেখানেও তারা গ্যাসের কাঠামো পেয়েছে বলে জানিয়েছিল। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ত্রিমাত্রিক জরিপ করার কথা থাকলেও তারা তা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। কিন্তু পেট্রোবাংলা সে দাম বাড়ায়নি। এ জন্য তারা কাজ না করে চলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *