ছাত্রীর লাঞ্ছনা ঠেকাতে গিয়ে ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত

Slider শিক্ষা

 

2016_01_22_21_33_56_OeJrQN0JjrSLBQpSnKbSVrm7WNUjeA_original

 

 

 

 

 

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দুই দর্শনার্থী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার সময় বাধা দেয়ায় এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন কর্মী।

লাঞ্ছনার শিকার মোজাহিদুল ইসলাম  ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গীর মোড়ে এ লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ওই তিন ছাত্রলীগ কর্মী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আবু সাদাত মো. সায়েম, ৪৩তম আবর্তনের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের জামশেদ আলম ও বাংলা বিভাগের জাহিদ হাসান।

এরা সবাই আল বেরুনী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলামের অনুসারী।

অধ্যাপক মোজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে রিকশায় করে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় সায়েম নামের ঐ শিক্ষার্থী একটি মেয়ের ওড়না ধরে টানাটানি করছে দেখে আমি রিকশা থামিয়ে ধমক দিয়ে তা থামাতে যাই। এসময় মেয়েটির সঙ্গে থাকা একজন ছেলেকেও মারধর করছিলো জামশেদ ও জাহিদ হাসান নামের অপর দুই শিক্ষাথী।’

‘আমি তাদের থামতে বলায় ওই তিনজন এসে আমাকে ঘিরে ধরে অশোভন আচরণ করতে থাকে।’

‘এসময় আমি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দিলে সায়েম আমাকে বলে, শিক্ষক হইছেন তো কী হইছে?’

‘তাদের বাড়াবাড়ির একপর্যায়ে তাদের একজন আমাকে মারতে উদ্যত হয়।’

‘এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরশিদুর রহমান ও আমার বিভাগের এক ছাত্র এসে তাদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করে।’ বলেন ওই শিক্ষক।

এ বিষয়ে জানতে আবু সাদাত সায়েম, জামশেদ ও জাহিদ হাসানের বক্তব্য জানতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মুঠোফোনগুলো বন্ধ থাকায় তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে তাদের হলের ‘বড়ভাই’ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি।

এসময় উল্টো তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার তাদেরকে গালি দিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু তারা স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে এরকম কিছু শুনিনি।’

গালি দেয়ার বিষয়ে অধ্যাপক মোজাহিদুল বলেন, ‘আমি শিক্ষক। গালি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাদের অভিযোগ মিথ্যা। আমি শুধু ধমক দিয়ে তাদের থামতে বলেছি।’

‘অন্তত একজন শিক্ষক হিসেবে হলেও একজন নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছনার হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছি এটাই বড়। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব ‘যৌন সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নিব।’

ছাত্রলীগকর্মী সায়েমের বিরুদ্ধে এর আগেও ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মারধর ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে সায়েম। এঘটনার বিচার চেয়ে ওই দম্পত্তি প্রক্টরের কাছে সায়েমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও করেছিলেন।

এছাড়া অপর দুই ছাত্রলীগকর্মী জামশেদ ও জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে ‘ছাত্রলীগ না করায় চুরির অপবাদ দিয়ে’ হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, ‘ছাত্রী লাঞ্ছনার বিষয়ে আমি শুনিনি। তবে এ ধরনের অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *