দাম কমার প্রভাব নেই খোলা বাজারে

অর্থ ও বাণিজ্য

 

1452951982

 

 

 

 

 

বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও নির্ধারিত দিন শনিবার রাজধানীর কোনও বাজারেই সয়াবিন তেলের দাম একপয়সাও কমেনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে খোলা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯৩ টাকা।  বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ৯৫ টাকা থেকে ১০২ টাকা দরে। যা বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ৯০ টাকা থেকে ৯৭ টাকা দরে। আর ৫ লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে আগের মূল্য ৪৫০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা দরে।

বাণিজ্যমন্ত্রীর সামনে ঘোষণা দেওয়ার পরেও সয়াবিনের দাম কেন কমল না—জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, এগুলো হচ্ছে মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভোজবাজি। তারা সরকারকে শান্ত রাখতে এবং সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে এ ধরনের ঘোষণা দিয়েই খালাস। দাম আর সেভাবে কমান না।

যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের উপস্থিতিতে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য পরামর্শক কমিটির সভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, শনিবার থেকে দেশের সর্বত্র প্রতিলিটার সয়াবিনে ৫ টাকা করে কমবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর মৌলভীবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আবুল হাশেম  বলেন, শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে অন্তত আরও সপ্তাহখানেক সময় তাদের দিতে হবে। মিলগেটে দাম কমলেও সেই তেল এনে পাইকারি ও পরবর্তী সময়ে খুচরা ও ভোক্তা পর্যায়ে এ সুবিধা দিতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। তবে কোথাও কোনও পণ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে, তা কার্যকর হতে তো কোনও সময় লাগে না—এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি হেসে বলেন, কী বলেন ভাই!

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এ কাজটি করছেন আমদানিকারক, উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় কম। সেই হিসেবে দেশের কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্য নির্ধারণ করেননি। খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম তারা কমিয়েছেন খুব সামান্যই। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার সুফল ব্যবসায়ীরা পেলেও ক্রেতারা পাননি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম পাঁচ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম ছিল ৬০২ ডলার। একই দিন তা সর্বনিম্ন ৫৯৯ ডলারেও বিক্রি হয়েছে। দেশে আমদানির পর এগুলো পরিশোধন করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, প্রচার ও ব্যবসায়ীদের মুনাফাসহ প্রতি লিটারে খরচ পড়ে ৬০ সর্বোচ্চ ৬২ টাকা। কিন্তু খুচরাবাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা দরে। বোতলজাত সয়াবিন এখনও বিক্রি হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০২ টাকা লিটার দরে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম সবচেয়ে বেশি উঠেছিল। ওই সময় প্রতিটন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৪১৪ ডলার। ওই বছর দেশের বাজারগুলোয় প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা দরে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ৫০ শতাংশ কমলেও দেশীয় বাজারে কমেছে মাত্র ৯ শতাংশ। এখন মিলমালিকদের ঘোষণা অনুযায়ী লিটার প্রতি ৫ টাকা কমলে এ হার হবে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ।

২০১৫ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, আগস্টে সামান্য বেড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে কমে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, অক্টোবরে কমে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নভেম্বরে কমেছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *