ওয়ান ইলেভেন। বাংলাদেশের রাজনীতির বাক পরিবর্তনের দিন। সে পরিবর্তনের ধারায় এখনও চলছে দেশ। ওয়ান ইলেভেনের নায়ক জেনারেল মইন উ আহমেদ অবশ্য এখন ‘নির্বাসিত’। মূলত তারই নেতৃত্বে সরিয়ে দেয়া হয় ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারকে। ক্ষমতায় আসীন হয় ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে আরেকটি সরকার। দুই বছর ক্ষমতায় ছিল বেসামরিকের মোড়কে মোড়ানো ওই সরকার। যদিও কে না জানতো, পর্দার আড়ালে থেকে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন জেনালের মইন উ আহমেদ।
‘শান্তির স্বপ্নে- সময়ের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে মইন উ আহমেদ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ওয়ান ইলেভেনের প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছেন। যদিও তার লেখার অনেক তথ্যেরই বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ বইতে এমন অনেক তথ্যই রয়েছে যার সঙ্গে সত্যের সংশ্লিষ্টতা নেই। জেনারেল মইন তার সেনাপ্রধান হওয়ার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন। বারবারই তিনি বলতে চেয়েছেন, সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য তিনি কোন লবিং-তদবির করেননি। যদিও কে না জানে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্গন করেই তাকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অন্য এক জ্যেষ্ঠ সেনাকমকর্তাকে সেনাপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রায় মনস্থির করেছিলেন। ফাইলও চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের ভূমিকার কারণেই সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছিল। সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী আবার সম্পর্কে সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা।
ওয়ান ইলেভেনের পূর্ববর্তী সময়ে সংঘাতের রাজনীতি কিভাবে তাকে মর্মাহত করতো তার বিস্তারিত বয়ান লিখেছেন জেনারেল মইন উ আহমেদ। যার সঙ্গে অবশ্য তেমন কেউই দ্বিমত পোষন করবেন না। তবে সেসময়কার তান্ডবে জড়িতদের কাউকে তিনি বিচারের মুখোমুখি করেছেন এমন বিবরণ পাওয়া যায় না। মইন উ আহমেদ লিখেছেন, একসময় ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি আমার সাথে দেখা করে জানালো, ‘সবদলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী সহায়তা করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংরাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য তারা জাতিসংঘকে অনুরোধ করবে।’ এ কথা সত্য কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ওয়ান ইলেভেনের অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে জাতিসংঘের তৎপরতার নামে যা বলা হয়েছিল, তার আর পরে সত্যতা মিলেনি। ওয়ান ইলেভেনের দিনে বঙ্গভবনের সংঘটিত অনেক সত্য জেনারেল মইন এড়িয়ে গেছেন বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন।